Skip to main content

Posts

ফেলুদা স্মরণে

ফেলুদা স্মরণে  যারা শিরোনাম দেখে সত্যজিৎ রায়ের অমর সৃষ্টি ফেলু মিত্তিরের কথা ধরে নিয়েছন তারা যে ভীষণভাবে হতাশ হবেন তা বলাই বাহুল্য । তাই আগে ভাগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি । আমার নিকটতম প্রতিবেশীর ঘর তালা বন্ধ । বেশ কিছুদিন হয়ে গেল কোন খবর নেই । মাঝে একদিন স্ত্রীর মুখে খবর পেলাম - কোলকাতায় ছেলের কাছে থেকে ফেলুকে ডাক্তার দেখানো হবে । তার কয়েকদিন পরই ফেসবুক মারফত জানা গেল ফেলু মায়ার বন্ধন ছিন্ন করে ইহলোক ত্যাগ করেছে । গৃহকর্তী গৃহস্বামী ছাড়াও বহু আত্মীয় বন্ধু তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেছেন । আমরাও শোক ও প্রার্থনা ব্যক্ত করে নিজেদের মধ্যে ফেলুকে নিয়ে স্মৃতিচারণা করে চলেছি । ফেলুর শান্ত স্বভাব , বুদ্ধিদীপ্ত চোখ ও অসীম ধৈর্যের পরিচয় নানাভাব পেয়েছি । যেমন ধরুণ ওদের ড্রয়িং রুমের আড্ডায় শব্দ তরঙ্গ হঠাৎ বে ড়ে  গেল । ফেলু পাশের ঘর থেকে এসে একবার    পর্যবেক্ষণ করে চলে গেল । আড্ডা হয়তো থামছেই না । রাত বে ড়ে  যাচ্ছে ।আর একবার এসে উঁকি মেরে চলে গেল । আড্ডা শেষে খাওয়া দাওয়া শেষ হতে না হতেই ফেলু করিডোরে। ঘুরতে    থাকে । মাঝে মাঝে এসে দরজার সামনে...
Recent posts

রবীন্দ্রনাথের বুদ্ধ পূজা

উনবিংশ শতকের মনীষীদের মধ্যে স্বামী বিবেকান্দ ও রবীন্দ্রনাথ গৌতম বুদ্ধের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল ছিলেন । বৌদ্ধ ধর্ম ভারতে প্রায় বিলুপ্ত হলেও বুদ্ধদেব কিন্তু হিন্দু অবতার বরিষ্ঠদের একজন । তাঁর জীবন ও বাণী সর্ব যুগের আদর্শ হতে পারে । সেই মহতী বাণী সমগ্রের সারমর্ম বিধৃত আছে চারটি শব্দের মধ্যে : মৈত্রী , করুণা, মুদিতা ও উপেক্ষা । প্রতিদিনের জীবন যাত্রায় এই চারটি গুণ অনুসৃত হলে মানুষ তার ক্ষুদ্র সত্তা অতিক্রম করে মহাত্ম্যা হবে , পুনর্জন্মের দুর্ভোগ ভুগতে হবে না ।ব্যাপারটা একটু বিশদ করি । আমরা সাধারণ মানুষরা আলাদা আলাদা সংসার পেতে সুখের সন্ধানে মেতে উঠি । এটা চাই , ওটা চাই - চাওয়ার শেষ নেই ! এই যে সর্বগ্রাসী অভিলাষ , এটাই সকল দু:খের মূল । তাই বুদ্ধ বললেন ," কামনা উপেক্ষা কর । হৃদয়ে সদা বহমান হোক মৈত্রী ও করুণা ধারা । সকলকে আপন কর । শুধু মানুষ নয় , মনুষ্যেতর প্রাণীকুলকেও আপন কর । এই অবাধ সেবা ধর্মের আচরণের ফলে মানুষ মহামানব হবে যা দেবত্ব প্রাপ্তির চেয়েও বড ।সেই অবস্থায় এক অনির্বচনীয় প্রশান্তিতে তার মুখমণ্ডল শোভিত হবে । এরই নাম মুদিতা । এই অপার্থিব রূপই পরিলক্ষিত হয়...

শব্দের মন মজানো ইতিহাস : Stoicism

আধুনিক জীবনযাত্রায় পাস ওয়ার্ডের ব্যাপকতা ও অপরিহার্যতা দেখে মনে হতে পারে ,মানবজাতির পূর্বপুরুষরা বুঝি এ ব্যাপারে মোটেই অবহিত বা অভ্যস্ত ছিল না । এ ধারণা কিন্তু ভুল । এখানে প্রমাণ হিসেবে দুটো মাত্র উদাহরণ দেওয়া হ'ল । একটি Old Testament থেকে অর্থাৎ যিশুর জন্মের আগে, আরেকটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার রেকর্ড থেকে । প্রাচীন বাইবেলের একজায়গায় Gileadites দের সাথে Ephramaimites দের যুদ্ধর কথা আছে । সেই যুদ্ধ শেষোক্ত দলের পরাজয় হয় । এক পলাতক Ephraimites কে জর্ডানের পথে দেখে তাকে থামিয়ে জিজ্ঞেস করা হয় সে Ephraimite কি না । সে মিথ্যে করে না বলে । তখন তাকে স্বদেশী না বিদেশী পরখ করার জন্য বলা হয় -- বল দেখি shibboleth ! শ্যামবাজারের শশীবাবুরমতো যারা তালব্য শ- য়ের জায়গায় দন্ত্য- স উচ্চারণ করেন ,তাদের মতো এই পলাতকও উচ্চারণ করল - sibboleth! আর তৎক্ষণাৎ বেচারা ধরা পড়ে গেল এবং তাকে কেতল করা হ'ল । শিবলেথ শব্দটা হিব্রু ভাষা থেকে জাত । এর আদি অর্থ শস্যশীষ বা স্রোতস্বিনী । কিন্তু পরিবর্তিত অর্থ হচ্ছে pass word বা test word. দ্বিতীয় pass word testing এর ঘটনাটা ঘটে ২০ জান...

শব্দের মন মাতানো ইতিহাস : ভালবাসার দেশটা

"তোমার সাথে দেখা না হলে আমার ভালবাসার দেশটা দেখা হ'ত না " -জটিলেশ্বরের ভালবাসার দেশটার অবস্থান মানুষের মনোজগতে। তার স্থান অতি উঁচুতে হলেও এর কোন ভৌগোলিক পরিচয় নেই । কিন্তু এখানে এখন যে-দেশের কথা বলা হবে সেটা সত্যিকারের ভালবাসার দেশ যার বাস্তব অস্তিত্ব আছে । জায়গাটা হচ্ছে আমেরিকার পেনসিলভেনিয়া রাজ্যের দক্ষিণ-পূর্বে Delware নদীর তীরে । নাম ফিলাডেলফিয়া । এই সেই ঐতিহাসিক শহর যেখানে বহু কষ্টার্জিত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র স্বাক্ষরিত হয় ১৭৭৬ সালে । সেই থেকে ইংরেজ শাসন মুক্ত হয়ে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র স্বাধীন সার্বভৌম গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে । ফিলাডেলফিয়াকে বলে City of Brotherly Love বা সৌভ্রাতৃত্বের শহর । এখানে প্রেমের ফল্গুধারা চির প্রবাহমান । প্রমাণ আছে নামটির মধ্যেই ।আসুন দেখা যাক । Philadelphia শব্দটার জন্ম গ্রীক মূল philein থেকে । অর্থ - to love . এর বিশেষ্য philia মানে - love , liking , fondness. আর গ্রীক adelphos - অর্থ ভাই । তাহলে প্রেমের শহরের হদিশ আমরা পেলাম । এবারে প্রেমের একটি বিশেষত্ব নিয়ে দুই একটি কথা বলি । প্রকৃত প্রেম মানুষের হৃদয়...

শব্দের মন মাতানো ইতিহাস : কোরাপশন কেচ্ছা

মানুষের সাথে শব্দের চরিত্রগত মিল আছে ।কোন মানুষই একদিনে পাকা চোর বা বদমাশ হয় না । শুরুতে সকলেই সরল সাদাসিধে থাকে । পরে যত ধনাগম হতে থাকে , যশ খ্যাতি পদমর্যাদা বাডতে থাকে তখন অনেকের মধ্যে গুমর , অহংকার লালসা ইত্যাদি বদগুণ ঢুকতে থাকে । অনেকে আবার ভয়ংকর রকমের অনৈতিক জীবনযাপন শুরু করে । এমন কি জঘন্য অপরাধ করতেও পিছু পা হয় না । মানুষই তখন আবার বলাবলি শুরু করে - অমন ভাল লোকটার একি পরিণতি হল ! শব্দের মধ্যেও অনুরূপ বৈশিষ্ট্য দেখতে পাওয়া যায় । আমরা উদাহরণ হিসেবে ছোট্ট তিন অক্ষরের ' note ' শব্দটা তুলে নিলাম । এর জন্ম ল্যাটিন শব্দ 'notus' থেকে । অর্থ : বিশেষভাবে জ্ঞাত (known) ।কোন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার নজরে এলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ' note ' করি। উকিল মহোদয় সওয়াল জবাবের সময় মাঝে মাঝে জজসাহেবকে অনুরোধ করেন - please get the point noted , yourHonour ! খ্যাতনামা উদ্যোগপতি বা শিল্পপতিকে আমরা বলি - noted entrepreneur / industrialist. সিনিয়ার অ্যাডভকেটদের আজকাল কোর্ট থেকে notary সম্মানে ভূষিত করা হয় । । তখন তাঁরা গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র attest বা প্রত্যয়িত করার ,...

শব্দের মন মাতানো ইতিহাস - একিলিস ও হেক্টরের দ্বন্দ্ব

Achelles' heel -এই ইডিয়ামের অর্থ: কারুর শারীরিক বা চারিত্রিক দুর্বলতার জায়গা ।একিলিস ছিলেন অন্যতম প্রধান গ্রিক বীরদের মধ্যে একজন । কিন্তু তার পায়ের গোডালি ছিল খুব দুর্বল । কেন দুর্বল তা জানতে হলে দুর্যোধনের কাহিনি উঠবেই । কুরু-পাণ্ডবের যুদ্ধ যখন দ্রুত ভয়ংকর পরিণতির দিকে এগুচ্ছে-শতপুত্রের মধ্যে অনেকেই নিহত , তখন গান্ধারী প্রিয় পুত্র দুর্যোধনকে অন্তত বাঁচিয়ে রাখার উপায় ভাবলেন । তিনি পুত্রকে বললেন গোপনে স্নান সেরে নিরাভরণ নিরাবরন দেহে তাঁর সামনে হাজির হতে । গান্ধারী মনে মনে ঠিকক করেছেন তাঁর সাধনা- লব্ধ শক্তি দিয়ে দুর্যোধনের শরীর দুর্ভেদ্য করে দেবেন । শুধু তো একবার চোখ খুলে তাকানোর অপেক্ষা!তাঁর মনের কথা টের পেয়ে শ্রীকৃষ্ণ এক ফাঁকে দুর্যোধনের কানে মন্তর দিলেন: যুবাপুরুষ তুমি ,মায়ের সামনে উলঙ্গ হয়ে দাঁডাবে? লজ্জার মাথা খেয়েছ ? দুর্যোধন তখন একখণ্ড লজ্জানিবারনী বস্ত্র নিম্নাঙ্গে জডিয়ে মায়ের সামনে এল । মা চোখের বাঁধন খুলে তাকানো মাত্র বস্ত্রাবৃত জায়গাটুকু ছাডা দুর্যোধনের বাকি শরীর লৌহ- কঠিন হয়ে গেল । কিন্তু ক্ষতি যা হওয়ার তা হয়ে গেছে । পরের ঘটনা আমাদের সবার ...

শব্দের মন মাতানো ইতিহাস : ইউথানেজিয়া ( Euthanasia ) , Euphemism

আজকাল প্রায়শ:ই ইউথানেজিয়া শব্দটা আমাদের কানে আসে বা চোখে পডে । প্রায় সবাই আমরা জানি যে শব্দটার অর্থ ব্যথাবিহীন বন্ধুপ্রতিম মৃত্যু । বহু রোগী দীর্ঘ দিন ধ'রে হয়তঅসহ্য কষ্ট ভোগ করছেন । কেউ হয়ত গভীর কোমায় আচ্ছন্ন হয়ে আছেন । এতে রোগীর নিজেরও কষ্ট ,তার আত্মীয় স্বজনদেরও কষ্ট । এর চেয়ে মৃত্যু উভয় পক্ষের কাছেই স্বস্তিদায়ক । কিন্তু সে মৃত্যু কেমন মৃত্যু ? আত্মহত্যা আইন বিরুদ্ধ এবং অনভিপ্রেত । ওষুধ খাইয়ে বা বল প্রয়োগ ক'রে মেরে ফেলা শুধু আইন বিরুদ্ধ নয় , ভয়ংকরভাবে অমানবিক । তাহলে রইল বাকি ইউথানেজিয়া । এতে ডাক্তারের সাহায্য লাগে - ওষুধের গুণে শুয়ে শুয়ে বা ব'সে ব'সে আরামের সঙ্গে ঘুমে ঢ'লে পডা যায় । এ ধরণের চিকিৎসার ভাবনা যেহেতু অতীতে ছিল না , তাই বোঝাই যাচ্ছে শব্দটা নতুন তৈরি হয়েছে । দেখা যাক এর কয়েনিং কম্বিনেশনটা কেমন। গ্রিক প্রেফিক্স " eu " এর অর্থ : good /well বা pleasant - আর গ্রিক thanatos মানে মৃত্যু। এই দুয়ে মিলে euthanasia! তবে ইউথানেজিয়া চিকিৎসা পদ্ধতি কিন্তু এখনও পর্যন্ত সর্বত্র আইনসিদ্ধ নয় । গোটা পৃথিবী জুডে বিতর্ক চলছে ।...

শব্দের মন মাতানো ইতিহাস :প্রসঙ্গ জানুয়ারি

সবারই জানা ইংরেজি বছর শুরু হয় জানুয়ারি দিয়ে । শব্দটা এসেছে ল্যাটিন " Januarius " থেকে। এর অর্থ : month of Janus. জানুয়ারির ওপর জেনাসের কী প্রভাব তা যথা সময়ে বলা যাবে ।তার আগে কয়েকটি মজার কথা বলে নিই । খ্রীষ্টান মিশনারিরা এক সময় হিন্দু পৌত্তলিকদের খুব হেয় জ্ঞান করত । অথচ প্রাচীন রোমান ও গ্রিকরাও ঘোরতর পৌত্তলিক ছিল। তাদের মিথলজি বহু বিচিত্র দেবদেবীতে ভরা । Janus ছিলেন একজন রোমান দেবতা । তাঁর সামনে পেছনে মুখ ছিল । অর্থাৎ তিনি সামনে পেছনে দুদিকেই দেখতে পেতেন । তাঁর ওপর নগর রক্ষার গুরু দায়িত্ব ন্যস্ত ছিল । সেজন্য তাঁকে সব সময় চার চোখ , চার কান খোলা রাখতে হ'ত । পরবর্তীকালে তাঁর status পরিবর্তন ঘটে । তখন তাঁকে দ্বারপাল হিসেবে দেখা যেত । আমেরিকার উত্তর দিকের আবাসনগুলোতে গেটকিপারকে বলে janitor. বোঝাই যাচ্ছে শব্দটা এসেছে রোমান দেবতা Janus থেকে । আমেরিকা যেহেতু দুনিয়া জুডে দাদাগিরি ক'রে বেডায় তাই তারা খোদার ওপর খোদকারির মতো নিউ ইয়র্কের একটি কলেজের ( City college ) শিল মোহরে Janus - এর তিনটি মুখের প্রতিকৃতি মুদ্রিত করেছে । সেখানে লেখা হয়েছে : Respice, ...

"স্বাধীনতা " সপ্তাহের নিবেদন

শব্দ হচ্ছে চিন্তার বাহক l সভ্যতার একটা বড় পরিচয় হচ্ছে এই চিন্তাস্রোতকে উপযুক্ত ভাষা বা চিত্রের মাধ্যমে প্রকাশ করা l যে দেশের ভাষা যত বেশি শব্দে র অধিকারী, সে দেশ তত বেশি ভাব বা চিন্তাসম্পদে ধনী l আমাদের অতীত সভ্যতা ধর্ম , দর্শন ,সাহিত্যে গর্ব করার মতো ঐশ্বর্যের অধিকারী l কিন্তু বিজ্ঞান , প্রযুক্তিবিদ্যা চিকিৎসাশাস্ত্র , সমাজবিজ্ঞান ,মনোবিজ্ঞান ,রাষ্ট্রবিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ে বহু দেশের তুলনায় পিছিয়ে l উদাহরণস্বরূপ আমরা রাজনীতিঘেঁষা তিনটে শব্দ বেছে নিলাম : 1. Liberty 2.Freedom 3.Independence - এই তিনটি শব্দের জন্য আমাদের দেশে সংস্কৃত ভিত্তিক ভাষা ভাণ্ডারে দেখতে পাই শুধু স্বাধীনতা বা স্বতন্ত্রতা l উপরের শব্দ তিনটি সমার্থক হলেও তাদের ভেতর সুক্ষ্ম ফারাক আছে l Freedom বলতে বোঝায় ক্ষমতা বা অধিকার যার বলে আমরা যে কোন মতামত, মনোভাব ব্যক্ত করতে পারি lকোন বহির্শক্তির নিয়ন্ত্রন আমাদের ওপর থাকবে না l Liberty ও freedom এর মধ্যে আপাতদৃষ্টিতে কোন পার্থক্য নেই l তবে হ্যাঁ, liberty কিন্তু সব সময় কোন না কোন উৎস থেকে প্রাপ্ত বা অর্জিত এবং এই স্বাধীনতা ভোগ করার সময় কখনই মাত্রাজ্ঞান হা...

শব্দের মন মজানো কাহিনী : প্রসঙ্গ-ড্রিল মাস্টারের অমরত্ব

1962 সালে চীন-ভারতের যুদ্ধে চীনাদের হাতে ভারতীয় সৈন্যবাহিনী বিচ্ছিরিভাবে অপদস্থ হয়েছিল। অপদস্থ হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে এই যে ভারতের প্রধান মন্ত্রী শান্তির দূত হিসেবে গোটা বিশ্বে ঘুরে বেড়াতেন l প্রতিরক্ষা দপ্তর সামলানোর ভার ন্যস্ত ছিল ভি কে কৃষ্ণ মেননের হাতে l তিনি তাঁর ব্যক্তিগত অভিধান থেকে " war preparedness " কথাটা অপ্রয়োজনীয় ভেবে কেটে দেন l তাঁর ধারণা ছিল-যে দেশের স্বনামধন্য প্রধানমন্ত্রী মৈত্রীর বাণী নিয়ে দেশে দেশে ভ্রlম্যমান সে দেশ কি কখনও আক্রান্ত হতে পারে ? তাছাড়া , চীনের প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাই নেহেরুজির বন্ধু ছিলেন l দুটো দেশই " পঞ্চশীল " মৈত্রীমন্ত্র অনুসরণ করবে বলে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল l তাই অপ্রত্যাশিত এই যুদ্ধের পর প্রতিরক্ষা মন্ত্রী গদিচ্যুত হলেন l প্রধানমন্ত্রী ভগ্নহৃদয়ে দু বছরের মধ্যেই মরদেহ রাখলেন l ঐ ধাক্কা খাওয়ার পর প্রতিরক্ষা দপ্তরের টনক নড়ে l সেনাবাহিনী ঢেলে সাজানোর কারিক্রমের মধ্যে স্কু ল কলেজে ব্যাপকভাবে N C C training course চালু হয়ে যায় l আমাদের কলেজের ( ভিক্টোরিয়া কলেজ- বর্তমান নাম : এ বি এন শীল কলেজ , কোচব...

শব্দের মন মাতানো ইতিহাস : প্রসঙ্গ-ডেসিবেল

প্রতি বছর পুজো আসে রাশি রাশি চেনা অনুষঙ্গ নিয়ে । একদিকে যেমন আছে শিউলির মিষ্টি গন্ধ , কাশফুল , পদ্ম , সাদা মেঘ , নতুন পোশাক, ঢাকের বাদ্যি, ছুটি ইত্যাদি তেমনি অন্যদিকে আছে গান ও স্তোত্রপাঠের নামে কানফাটানো আওযাজের আয়োজন! সম্মিলিত শব্দ সম্ভার ক্রমে শ্রুতিমধুর থেকে শ্রুতিকটু হযে দূষণের উৎস হযে ওঠে। এই অবস্থা থেকে পরিবেশকে রক্ষা করার জন্য মহামান্য উচ্চ আদালত বিধি নিষেধ আরোপ করেছে-৬৫ডেসিবেলের বেশি জোরে শব্দ উৎপাদন করা চলবে না । এরকম আরো অনেক ভালো ভালো আইন দেশে আছে। কিন্তু আইন ভঙ্গকারীদের শাস্তি দেওযার ভার যাদের হাতে ন্যস্ত তারা সচরাচর এসব বিচ্যুতি না দেখার ভাণ করে থাকে। তাই নাগরিকদের কাছে আইন থাকা না থাকা সমান যাহোক আদালতের দৌলতে ডেসিবেল শব্দটার সঙ্গে সাধারণ মানুষ বেশ ভালভাবেই পরিচিত। আমরাও তাই দেখে নিই ডেসিবেল ও তার স্বজনদের জন্ম পরিচয়। Decibel হচ্ছে শব্দ মাপার শ্রবণগ্রাহ্য ক্ষুদ্রতম একক। এর দুটো ভাগ: deci + bel. ডেসি মানে দশ ভাগের এক ভাগ আর বেল শব্দটা এসেছে টেলিফোনের আবিষ্কর্তা স্বনামধন্য বৈজ্ঞানিক আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল নাম থেকে। আমরা জানি টেলি মানে দূর আর ফোন মানে শব্...

How old are you ?

"চালশে ধরা" কথাটার সাথে আমরা সকলেই পরিচিত । সাধারণভাবে এ কথার মানে হচ্ছে বয়সের সাথে দৃষ্টি শক্তির হ্রাস পাওয়া । এই নির্মম সত্যের সাথে আমরা মুখোমুখি হই পড়তে বা লিখতে গিয়ে । ছোট হরফের লেখা আর আগের মতো খালি চোখে পরিস্কার দেখা যায় না । + পাওয়ারের লেন্স দরকার হয় । চল্লিশের পর থেকে বার্ধক্যের লক্ষণ আরো নানাভাবে দেখা দিতে থাকে । একে একে শমন জারি হতে থাকে শরীরের বিভিন্ন দপ্তর থেকে । আজ দাঁত ব্যথা তো কাল পেট বা বুক । পরশু আয়নায় চুলের সফেদায়ন বা প্রসারমান ললাটদেশ দেখে আঁৎকে ওঠা ! এই সকল সমস্যা শুধু যে আমাদের তা কিন্তু নয় । পৃথিবীর সব দেশের মানুষের বেসিক বিষয়গুলো মোটামুটি একই রকমের । চল্লিশ বছর বয়স মানে জীবনসূর্য ইতিমধ্যেই পশ্চিম দিকে ঢলতে শুরু করেছে । অর্ধেক জীবন পেরিয়ে প্রৌঢ়ত্বপর্ব শুরু হয়ে গেছে। ক্রমে আসবে বার্ধক্য, তারপর মৃত্যু সত্তর থেকে আশির মধ্যে । মানুষের গড় আয়ু বেড়ে গেলেও সকলের পক্ষে কিন্তু একশ হাঁকানো সম্ভব না । এটা ক্রিকেটের ক্ষেত্রে যেমন সত্য তেমনি জীবনের ক্ষেত্রেও । এবারে দেখা যাক এই চরম সত্যগুলোর প্রতিফলন ভাষাভাণ্ডারে কেমন পড়েছে । চল্লিশকে...

প্রবাদ নিয়ে বাদ প্রতিবাদ

প্রাক কথন : কিছুদিন আগে ফেসবুকে শব্দের মন মজানো কাহিনি সম্ভার নিয়ে বন্ধুদের সাথে যোগাযোগের একটি সাঁকো বেঁধেছিলাম । পুজোর বাদ্যি বেজে ওঠার পর সে পর্ব স্থগিত করি । পুজো মরশুম শেষ হওয়ার পর আবার ইচ্ছে জাগছে নতুন কোন সওদা নিয়ে বন্ধুদের কাছে হাজির হই !আমার প্রস্তাব - চলুন আমরা প্রচলিত প্রবাদ প্রবচনগুলোকে একটু উল্টে পাল্টে দেখি । আমরা সবাই জানি প্রবাদ মানে পরম্পরাগত বাক্য , লোকশ্রুতি বা ব্যবহার- সিদ্ধ চলতি কথা । আমরা ধরেই নিই যে প্রবাদ প্রবচন কালোত্তীর্ণ । তাদের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নাতীত । কিন্তু সত্যিই কি তাই ? প্রবাদ প্রবচন কোন বিশেষ সময়ের সৃষ্টি । সেই সময়ের আর্থ- সামাজিক বা ধর্মীয় প্রেক্ষিত ঐ নির্মিতি প্রক্রিয়ার পেছনে কাজ করেছিল । সুতরাং এটা খুব স্বাভাবিক যে পরিবর্তিত পরিবেশে সেইসব প্রবাদ তাদের প্রাসঙ্গিকতা পুরোপুরি না হলেও আংশিকভাবে হারাতেই পারে । কারণ পরিবর্তন হচ্ছে জগতের নিশ্চিত পরিণতি । যে কোন উক্তিকে শেষ কথা বলে ধরে নিলে চিন্তাশক্তির বহমানতা বিঘ্নিত হয় । নির্বিচারে মেনে নেওয়াটা অভ্যেস হয়ে দাঁড়ায় ।এই জাড্যতা ঝেড়ে ফেলে দিয়ে হোক না একটু বাদ প্রতিবাদ ! নিচের প্র...

জলসংকট ও ভারত

কোন লেখায় বেশি পরিসংখ্যান থাকলে আমি সাধারণত পাস কাটিয়ে চলি । কারণ পরিস্কার ! স্ট্যাটিস্টিকস- এর ফোবিয়া ! কিন্তু পানীয় জলের সমস্যার ওপর টাইমস অব ইন্ডিয়ার ২৩ মে'র একটা আরটিকল্ স্ট্যাটিসটিকস বহুল হওয়া সত্ত্বেও এক নি:শ্বাসে পড়ে ফেললাম । যেহেতু এই গ্লোবাল সমস্যায় ভারতের দিকে আঙ্গুল উঠেছে তাই সংক্ষেপে ব্যাপারটা ফেসবুকে তুলে ধরছি পৃথিবীর মোট জল সম্পদের পরিমাণ : 1386 মিলিয়ন কিউবিক কিমি ।( এক কিউবিক মিটার =1000 লিটার ) এর 96.5% আছে সমুদ্রে ।সাগর উপসাগরের লোনা জলের পরিমাণ0.9% l আর পেয় জলের পরিমাণ 2.5% । ভারতের ভাগে রয়েছে 4000 বিলিয়ন কিউবিক মিটার । এই জল ভাণ্ডারের মাত্র 1869bcm আমরা পেতে পারি দুটো উৎস থেকে : ১) ভূতলে অবস্থিত হ্রদ ,সরোবর , নদ নদী ইত্যাদি । এর পরিমাণ : 728bcm ২) ভূগর্ভস্থ জল : এর পরিমাণ : 395bcm যেহেতু ভারত কৃষিপ্রধান দেশ তাই আমাদের ভূগর্ভস্থ জলের সিংহভাগ চাষবাসে খরচ হয় । তার পরিমাণ : 83% ! শিল্পে লাগে 5% আর পারিবারিক প্রয়োজনে 12% এবারে ভারত , চীন ও আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদিনের মাথাপিছু জল খরচের তুলনামূলক চার্ট দেখুন: দেশ 2000সালে ব্যবহৃত জলের % ...

যোগ বিষয়ে ব্যতিক্রমী ভাবনা

২১শে জুন বিশ্ব যোগ দিবস । যোগের মাহাত্ম্য ও ভারতের অবদান নিয়ে এতটাই প্রচার চলছে যে কিছু কথা আপনার আমার কানে ঢুকবেই । এই মূহুর্তে আমার নাতনি সেই বহুশ্রুত গানটা গাইছে - বিশ্বসাথে যোগে যেথায় বিহারো ....." এ গান আমার ছেলেও গেয়েছে তার ছেলেবেলায় । তখন ততটা মনোযোগ দিই নি । আজ আমি তাক থেকে গীতবিতান নামিয়ে গানটা বার করে পড়লাম । আমার তাৎক্ষণিক অনুভূতি আপনাদের সাথে ভাগ করে নিচ্ছি । কালজয়ী কবিরা যেহেতু স্থান কাল পাত্রপাত্রী ও রাজনীতির ঊর্ধ্বে , তাই আশা করি আপনাদেরও ভাল লাগতে পারে । সকলেই জানেন, যোগের অর্থ - চঞ্চল মনের গতি রোধ করে ধ্যেয় বস্তু বা সত্ত্বার সঙ্গে একীভূত হওয়া । কিন্তু লক্ষ্য করুন, আলোচ্য গানের বিশ্বপিতা নিজেই যুক্ত হচ্ছেন বিশ্বের সাথে ! শাস্ত্রে আছে - ভক্ত ভগবানকে খোঁজে । এখানে ভক্তের কিন্তু আলাদা স্টেটাস বা প্রিভিলেজ নেই । ভগবান সকলকেই আপন করে নিতে নিজে এগিয়ে এসেছেন । কবিও সাধারণের মধ্যে থেকেই ঈশ্বরের সাথে যুক্ত হতে চাইছেন । দ্বিতীয়ত দেখুন , ধ্যান সম্পর্কে আমাদের প্রচলিত ধারণা হচ্ছে - মনে বনে কোণে - এই তিনটে ধ্যানের উপযুক্ত জায়গা । রবীন্দ্রনাথ বলিষ্ঠ প্...

ছাত্র শিক্ষক সংবাদ : মায়ার খেলা

ছাত্র : সত্যের সংজ্ঞা কি স্যার ? শিক্ষক : সাত কাণ্ড রামায়ণ পড়ে কেউ যদি জানতে চায় জানকী কার বাপ , সেটা যেমন হাস্যকর , তেমনি এই যুগে কেউ যদি গুগল ছেড়ে শিক্ষকের কাছে আসে সত্যের সংজ্ঞা জানতে তা হবে আরও আশ্চর্যের ! তোমার মতলব কি বলতো ? লেগ পুলিং নয়তো ? ছাত্র : না স্যার ! আমি কি তাই করতে পারি ? শিক্ষক : তোমাকে আমি বিশ্বাস করি , স্নেহ করি - তাই বলছি : যা শাশ্বত , ত্রিকালব্যাপী অপরিবর্তিত , তাকেই বলে সত্য । ছাত্র : স্যার একটু সহজ করে বলা যায় কি ? শাশ্বত , ত্রিকালব্যাপী - কথাগুলো বড্ড কঠিন । শিক্ষক : আচ্ছা বাবা , চেষ্টা করছি । জোয়ারের সময় গঙ্গা দেখেছ ? ছাত্র : হ্যাঁ স্যার , হুগলিতে গঙ্গার ধারে আমার মামার বাড়ি ! ঢেউগুলো তখন ফুলে ফেঁপে দুকূল ছাপিয়ে ধেয়ে আসে । শিক্ষক : কোন দিকে ধেয়ে আসে ? ছাত্র: উত্তর দিকে ! জোয়ারের সময় তো উল্টো স্রোত ! শিক্ষক : তুমি নিজের চোখে যা ঘটতে দেখ , তাকেই তো তুমি ফ্যাক্ট বা রিয়ালিটি বল ! কিন্তু তোমার জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা থেকে তুমি জান যে হুগলিতে গঙ্গা দক্ষিণমুখী ।তুমি যা দেখছ তা সাময়িক । একই ভাবে রূপ যৌবন , ধন দৌলত - সবই সাময়িক ।এই আছে , এই নেই ! শুধু...

কোচবিহার রামভোলা স্কুলের স্মৃতিচারণা

-- কোচবিহার রামভোলা স্কুলের স্মৃতিচারণা -- রাজ্যস্তরে   সম্মানিত    শিক্ষকররত্ন  শিবাশিস মজুমদার অনুরোধ করেছেন কোচবিহার রামভোলা স্কুলের ছাত্র শিক্ষক সম্প্রীতি সম্পর্কে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বিগত দিনের কিছু তথ্য সর্বসমক্ষে তুলে ধরতে । এরই মধ্যে দেখছি আমার কর্মস্থল হিন্দুস্তান কেবলস হাই স্কুলের ছাত্রদের মধ্যে কেউ কেউ তাদের প্রিয় স্কুল নিয়ে স্মৃতিচারণা করছে । তখনই জাড্যতা ঝেড়ে ফেলে লিখতে শুরু করি এবং দেখছি একাজে আমি নিজেও আনন্দ পাচ্ছি । আমাদের স্কুলের অবস্থান রাজপ্রাসাদ থেকে অল্প দূরে । স্কুলের উল্টোদিক গুঞ্জবাড়ির বড়দীঘি । ওখানেই  মদনমোহন (জগন্নাথ) ঠাকুরের মাসীর বাড়ি।স্কুলের পশ্চিমে তোর্সা নদীর বাঁধ । আমি রামভোলা স্কুলে ঢুকেছিলাম ১৯৫৯ সালে সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র হিসেবে । ৬৩ তে টেস্ট ও ফাইন্যাল পরীক্ষা ৬৪ সালে । অর্থাৎ আজ থেকে প্রায় ছয় দশক আগের স্মৃতি ভাণ্ডারের ডালা খোলা হচ্ছে ! সেই সময় রামভোলা স্কুলের  ক্লাসরুমে পাখা ছিল না । সাহেবের মতো সাদা রঙের অধিকারী নলিনী বোস স্যার গরমে কাতর হয়ে তালপাতার পাখা ধরেছিলেন । ক্লাসে পায়চারি করতে ...