Skip to main content

শব্দের মন মাতানো ইতিহাস : কোরাপশন কেচ্ছা

মানুষের সাথে শব্দের চরিত্রগত মিল আছে ।কোন মানুষই একদিনে পাকা চোর বা বদমাশ হয় না । শুরুতে সকলেই সরল সাদাসিধে থাকে । পরে যত ধনাগম হতে থাকে , যশ খ্যাতি পদমর্যাদা বাডতে থাকে তখন অনেকের মধ্যে গুমর , অহংকার লালসা ইত্যাদি বদগুণ ঢুকতে থাকে । অনেকে আবার ভয়ংকর রকমের অনৈতিক জীবনযাপন শুরু করে । এমন কি জঘন্য অপরাধ করতেও পিছু পা হয় না । মানুষই তখন আবার বলাবলি শুরু করে - অমন ভাল লোকটার একি পরিণতি হল !
শব্দের মধ্যেও অনুরূপ বৈশিষ্ট্য দেখতে পাওয়া যায় । আমরা উদাহরণ হিসেবে ছোট্ট তিন অক্ষরের ' note ' শব্দটা তুলে নিলাম । এর জন্ম ল্যাটিন শব্দ
'notus' থেকে । অর্থ : বিশেষভাবে জ্ঞাত (known) ।কোন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার নজরে এলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ' note ' করি। উকিল মহোদয় সওয়াল জবাবের সময় মাঝে মাঝে জজসাহেবকে অনুরোধ করেন - please get the point noted , yourHonour ! খ্যাতনামা উদ্যোগপতি বা শিল্পপতিকে আমরা বলি - noted entrepreneur / industrialist. সিনিয়ার অ্যাডভকেটদের আজকাল কোর্ট থেকে notary সম্মানে ভূষিত করা হয় । । তখন তাঁরা গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র attest বা প্রত্যয়িত করার , এমনকি affidavit করার magistrate power পর্যন্ত পেয়ে যান ।এসব দেখে এক বন্ধু কানের কাছে বার বার বলে - " ওরে নুটু ,তোর কি উচ্চাকাঙ্খা বলে কোন বস্তু নেই !বেশি ছোট হয়ে থাকলে মানুষ মাডিয়ে যাবে , ছাগল মাথা মুডে খাবে ।তোর ভেতরও অসীম সম্ভাবনা আছে । ঐ তো দূরে জেল্লা নিয়ে glamorous আর glorious দাঁডিয়ে ! তুইও ওদের মতো বর্ণালি ছডিয়ে ময়ূরের মতো চোখ ধাঁধানো রূপ পেতে পারিস ।very simple operation !শুধু ওদের মতো পুচ্ছটা (suffix) বাডিয়ে নে । তারপর দেখ ফাটাফাটি কাণ্ড !
বন্ধুর কথায় প্রলুব্ধ হয়ে যেই না সে "notorious" হল, তখন তার অধ:পতন আর ঠেকায় কে ? এখন সে notorious criminal, notorious thief , notorious liar!আরো কত কি!
একটা সদ্বংশজাত ( পেডিগ্রিধারী) শব্দ দেখুন কেমন করে এক লহমায় " notoriety "-র মূর্তরূপ হয়ে গেল !
শব্দের মন মাতানো ইতিহাস : এ্যালোপ্যাথি, হোমিওপ্যাথি ও টেলিপ্যাথি
ধরা যাক আড্ডায় বসে আপনারা এ্যালোপ্যাথি ও হোমিওপ্যাথির গুণাগুণ নিয়ে তুলনামূলক আলোচনা করছেন । এমন সময় আপনার কোন এক অন্তরঙ্গ বন্ধুর ফোন এল । উনি বললেন ," কেমন আছিস ভাই? কাল রাতে হঠাৎ তোর মুখটা মনে পডল । স্মৃতির ঢেউয়ে মনটা আচ্ছন্ন হয়ে গেল । আনন্দ নিশ্চয়ই পেয়েছি । আবার খারাপও লেগেছে । কত দিন দেখা হয় না বলতো ?"
আপনি জিজ্ঞেস করলেন,"কাল রাতে ? ক'টা নাগাদ? এগারোটা নয় তো? "বন্ধু "হ্যাঁ" বলা মাত্র আপনি এ প্রান্ত থেকে বলে উঠলেন ," কি আশ্চর্য ! এ যে টেলিপ্যাথি ! ঐ সময় আমিও তোর কথাই ভাবছিলাম ! "
এই যে শব্দটি আপনি উচ্চারণ করলেন , এই নিয়ে দুই এক কথা বলার আগে আপনাকে যদি প্রশ্ন করি, "টেলিপ্যাথিকে কি আপনি এ্যালোপ্যাথির সাথে একাসনে বসতে দেবেন ?" আপনি নিশ্চয়ই জোর দিয়ে বলবেন ," তা কি করে হয়? ওটা তো odd শব্দ !
চিকিৎসা শাস্ত্রের সাথে যুক্তই নয় ! কোবরেজি, হেকেমি,ইউনানি পর্যন্ত চলতে পারে । কিন্তু টেলিপ্যাথি একদম নয় " ।
ঠিক আছে- কোষ্ঠী বার করি ! দেখা যাচ্ছে- শব্দটার দুটো ভাগ । Tele মানে দূরত্ব । প্যাথির গ্রীক মূল হচ্ছে -patheia- অর্থ অনুভূতি । আর pathos -মানে কষ্ট ( রোগ জনিত)। আমাদের সব অসুখ কিন্তু শুধু শরীর ঘিরে নয় , মনকে ঘিরেও । আপনি হয়তো গেট আগলে দাঁডিয়ে আছেন টেলিপ্যাথিকে আটকানোর জন্য ।কিন্তু সাইকোপ্যাথিকে রুখবেন কেমন করে? তার সূত্র ধরেই তো সাইকোপ্যাথ ,সাইকিয়াট্রিষ্ট গট গট করে ঢুকে যাবে !
টেলিপ্যাথি , সাইকোপ্যাথি - দুটোরই যোগ psyche- র সাথে ।সাইকি মানে মন ।আপনার কিন্তু কিন্তু ভাবটা কাটানোর জন্য আপনাকে অনুরোধ করব- বন্ধুর সাথে হওয়া গতরাতের কথাগুলো একবার স্মরণ করতে । বুঝতে পারছেন আপনার বন্ধু স্মৃতি চারণার সময় আনন্দের সঙ্গে কষ্টও পাচ্ছিলেন - এবং আমাদের ধারণা , আপনারও অনুরূপ অনুভূতি হচ্ছিল । তার মানে ,আমাদের সকলেরই nostalgic ভাবনাগুলো মূলত pathos দিয়ে সম্পৃক্ত । এরই চরম রূপ বিরহজ্বালা !
আর একটি কথা না বললে এ আলোচনা অসম্পূর্ণ রয়ে যাবে । আমাদের ভেতর পাঁচ ইন্দ্রিয়ের অতিরিক্ত আর একটি ইন্দ্রিয় আছে তার নাম ষষ্ঠেন্দ্রিয়। ইংরেজিতে একে বলে ESP(Extra Sensory Perception ) এই অনুভূতি কম বেশি আমাদের সকলের মধ্যেই আছে । এটাই সম্প্রসারিত করে আমরা দূরের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারি দূরভাষের সাহায্য ছাডাই ।
যাদের মধ্যে শক্তিটা পরিমাণে বেশি থাকে তারা মানুষের মনের কথাও পডতে পারে ।এমনকি তারা দৈববাণীও(clairvoyance) পর্যন্ত শুনতে পায় । পণ্ডিতরা এই শক্তিকে গাঁজাখুরি গল্প বলে উডিয়ে না দিয়ে একে বলেছেন prescience বা foreknowledge.

Comments

Popular posts from this blog

রবীন্দ্রনাথের বুদ্ধ পূজা

উনবিংশ শতকের মনীষীদের মধ্যে স্বামী বিবেকান্দ ও রবীন্দ্রনাথ গৌতম বুদ্ধের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল ছিলেন । বৌদ্ধ ধর্ম ভারতে প্রায় বিলুপ্ত হলেও বুদ্ধদেব কিন্তু হিন্দু অবতার বরিষ্ঠদের একজন । তাঁর জীবন ও বাণী সর্ব যুগের আদর্শ হতে পারে । সেই মহতী বাণী সমগ্রের সারমর্ম বিধৃত আছে চারটি শব্দের মধ্যে : মৈত্রী , করুণা, মুদিতা ও উপেক্ষা । প্রতিদিনের জীবন যাত্রায় এই চারটি গুণ অনুসৃত হলে মানুষ তার ক্ষুদ্র সত্তা অতিক্রম করে মহাত্ম্যা হবে , পুনর্জন্মের দুর্ভোগ ভুগতে হবে না ।ব্যাপারটা একটু বিশদ করি । আমরা সাধারণ মানুষরা আলাদা আলাদা সংসার পেতে সুখের সন্ধানে মেতে উঠি । এটা চাই , ওটা চাই - চাওয়ার শেষ নেই ! এই যে সর্বগ্রাসী অভিলাষ , এটাই সকল দু:খের মূল । তাই বুদ্ধ বললেন ," কামনা উপেক্ষা কর । হৃদয়ে সদা বহমান হোক মৈত্রী ও করুণা ধারা । সকলকে আপন কর । শুধু মানুষ নয় , মনুষ্যেতর প্রাণীকুলকেও আপন কর । এই অবাধ সেবা ধর্মের আচরণের ফলে মানুষ মহামানব হবে যা দেবত্ব প্রাপ্তির চেয়েও বড ।সেই অবস্থায় এক অনির্বচনীয় প্রশান্তিতে তার মুখমণ্ডল শোভিত হবে । এরই নাম মুদিতা । এই অপার্থিব রূপই পরিলক্ষিত হয়...

শব্দের মন মাতানো ইতিহাস - একিলিস ও হেক্টরের দ্বন্দ্ব

Achelles' heel -এই ইডিয়ামের অর্থ: কারুর শারীরিক বা চারিত্রিক দুর্বলতার জায়গা ।একিলিস ছিলেন অন্যতম প্রধান গ্রিক বীরদের মধ্যে একজন । কিন্তু তার পায়ের গোডালি ছিল খুব দুর্বল । কেন দুর্বল তা জানতে হলে দুর্যোধনের কাহিনি উঠবেই । কুরু-পাণ্ডবের যুদ্ধ যখন দ্রুত ভয়ংকর পরিণতির দিকে এগুচ্ছে-শতপুত্রের মধ্যে অনেকেই নিহত , তখন গান্ধারী প্রিয় পুত্র দুর্যোধনকে অন্তত বাঁচিয়ে রাখার উপায় ভাবলেন । তিনি পুত্রকে বললেন গোপনে স্নান সেরে নিরাভরণ নিরাবরন দেহে তাঁর সামনে হাজির হতে । গান্ধারী মনে মনে ঠিকক করেছেন তাঁর সাধনা- লব্ধ শক্তি দিয়ে দুর্যোধনের শরীর দুর্ভেদ্য করে দেবেন । শুধু তো একবার চোখ খুলে তাকানোর অপেক্ষা!তাঁর মনের কথা টের পেয়ে শ্রীকৃষ্ণ এক ফাঁকে দুর্যোধনের কানে মন্তর দিলেন: যুবাপুরুষ তুমি ,মায়ের সামনে উলঙ্গ হয়ে দাঁডাবে? লজ্জার মাথা খেয়েছ ? দুর্যোধন তখন একখণ্ড লজ্জানিবারনী বস্ত্র নিম্নাঙ্গে জডিয়ে মায়ের সামনে এল । মা চোখের বাঁধন খুলে তাকানো মাত্র বস্ত্রাবৃত জায়গাটুকু ছাডা দুর্যোধনের বাকি শরীর লৌহ- কঠিন হয়ে গেল । কিন্তু ক্ষতি যা হওয়ার তা হয়ে গেছে । পরের ঘটনা আমাদের সবার ...

যোগ বিষয়ে ব্যতিক্রমী ভাবনা

২১শে জুন বিশ্ব যোগ দিবস । যোগের মাহাত্ম্য ও ভারতের অবদান নিয়ে এতটাই প্রচার চলছে যে কিছু কথা আপনার আমার কানে ঢুকবেই । এই মূহুর্তে আমার নাতনি সেই বহুশ্রুত গানটা গাইছে - বিশ্বসাথে যোগে যেথায় বিহারো ....." এ গান আমার ছেলেও গেয়েছে তার ছেলেবেলায় । তখন ততটা মনোযোগ দিই নি । আজ আমি তাক থেকে গীতবিতান নামিয়ে গানটা বার করে পড়লাম । আমার তাৎক্ষণিক অনুভূতি আপনাদের সাথে ভাগ করে নিচ্ছি । কালজয়ী কবিরা যেহেতু স্থান কাল পাত্রপাত্রী ও রাজনীতির ঊর্ধ্বে , তাই আশা করি আপনাদেরও ভাল লাগতে পারে । সকলেই জানেন, যোগের অর্থ - চঞ্চল মনের গতি রোধ করে ধ্যেয় বস্তু বা সত্ত্বার সঙ্গে একীভূত হওয়া । কিন্তু লক্ষ্য করুন, আলোচ্য গানের বিশ্বপিতা নিজেই যুক্ত হচ্ছেন বিশ্বের সাথে ! শাস্ত্রে আছে - ভক্ত ভগবানকে খোঁজে । এখানে ভক্তের কিন্তু আলাদা স্টেটাস বা প্রিভিলেজ নেই । ভগবান সকলকেই আপন করে নিতে নিজে এগিয়ে এসেছেন । কবিও সাধারণের মধ্যে থেকেই ঈশ্বরের সাথে যুক্ত হতে চাইছেন । দ্বিতীয়ত দেখুন , ধ্যান সম্পর্কে আমাদের প্রচলিত ধারণা হচ্ছে - মনে বনে কোণে - এই তিনটে ধ্যানের উপযুক্ত জায়গা । রবীন্দ্রনাথ বলিষ্ঠ প্...