Skip to main content

শব্দের মন মাতানো ইতিহাস : ভালবাসার দেশটা

"তোমার সাথে দেখা না হলে আমার ভালবাসার দেশটা দেখা হ'ত না " -জটিলেশ্বরের ভালবাসার দেশটার অবস্থান মানুষের মনোজগতে। তার স্থান অতি উঁচুতে হলেও এর কোন ভৌগোলিক পরিচয় নেই । কিন্তু এখানে এখন যে-দেশের কথা বলা হবে সেটা সত্যিকারের ভালবাসার দেশ যার বাস্তব অস্তিত্ব আছে । জায়গাটা হচ্ছে আমেরিকার পেনসিলভেনিয়া রাজ্যের দক্ষিণ-পূর্বে Delware নদীর তীরে । নাম ফিলাডেলফিয়া । এই সেই ঐতিহাসিক শহর যেখানে বহু কষ্টার্জিত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র স্বাক্ষরিত হয় ১৭৭৬ সালে । সেই থেকে ইংরেজ শাসন মুক্ত হয়ে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র স্বাধীন সার্বভৌম গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ।
ফিলাডেলফিয়াকে বলে City of Brotherly Love বা সৌভ্রাতৃত্বের শহর । এখানে প্রেমের ফল্গুধারা চির প্রবাহমান । প্রমাণ আছে নামটির মধ্যেই ।আসুন দেখা যাক ।
Philadelphia শব্দটার জন্ম গ্রীক মূল philein থেকে । অর্থ - to love . এর বিশেষ্য philia মানে - love , liking , fondness. আর গ্রীক adelphos - অর্থ ভাই । তাহলে প্রেমের শহরের হদিশ আমরা পেলাম । এবারে প্রেমের একটি বিশেষত্ব নিয়ে দুই একটি কথা বলি । প্রকৃত প্রেম মানুষের হৃদয় দ্রবীভূত করে । মান অপমান বোধ থাকে না প্রেমিক সব কিছু মুখ বুজে সহ্য করে । আমাদের আলোচ্য philein বা phileo শব্দটার মধ্যেও এই গুণগুলোর পূর্ণ প্রকাশ ঘটেছে । তার লেজে কাঁচি চালিয়ে ছেঁটে দিলেও সে নির্বিকার । বাডতি বোঝা চাপালেও আপত্তি নেই । সামনে বসতে দিলে যেমন খুশি -পেছনে ঠেলে দিলেও সে অখুশি নয় ।নমুনা হিসেবে কয়েকটি শব্দ পেশ করছি :-
১)philanthropy
২)philharmonic
3)philandering
4)philately
5)philology
6)philosophy
7) Bibliophile
8) Anglophile
9)Francophile
10)paedophilia
প্রথম ছটিতে prefix হিসেবে শব্দের প্রথমে - শেষের চারটিতে suffix হিসেবে শেষে বসানো হয়েছে । চেহারা ও স্থান পরিবর্তন ঘটলেও অর্থের কোন পরিবর্তন ঘটেনি । প্রদত্ত শব্দগুলোর অর্থ লেখার ব্যাপারে দ্বিধা ছিল । কিন্তু সকলের সুবিধে অসুবিধের কথা ভেবে বাংলা মানে পর পর সাজিয়ে দিলাম :
১) মানব প্রেম ২)সঙ্গীতে অনুরক্ত। ৩) ফুলে ফুলে মধু খেয়ে বেডানো ৪) স্ট্যাম্প সংগ্রহ করার শখ ৫) ভাষার ইতিহাস ও ব্যুৎপত্তি সংক্রান্ত পডাশোনা ৬) sophia মানে wisdom -সে বিষয়ে ভালবাসা ৭) পুস্তক প্রেমী ৮) ইংরেজ-প্রেমী ৯)ফরাসী- প্রীতি ১০) শিশু -প্রেম
শব্দের মন মাতানো ইতিহাস : মিশর রহস্য
নীল নদ ,মমি ও পিরামিডের দেশ মিশর বা ঈজিপ্টের ল্যাটিন নাম Aegyptius --তার থেকে জন্ম নেয় Egypt শব্দটা । এই নামের মধ্যে লুকিয়ে আছে gypsy শব্দটি যাকে ঘিরে ছডিয়ে রয়েছে কত যে রহস্যের পরত । ইতিহাস ,লোককথা ও মিথ এমনভাবে জড়াজড়ি হয়ে গেছে যে রহস্যভেদ করা কঠিন ।
সকলেরই জানা আছে ,জিপসি মানে যাযাবর সম্প্রদায় ।এদের বেশ কয়েকটা বিভাগ ও উপবিভাগ ছিল -- রোমানি , ডোমারি , নওয়ার , হেলেবি, ঘাগর ইত্যাদি ।
কবে , কখন তারা মিশরে গিয়েছিল তা নিশ্চিতভাবে কেউ জানে না । তবে কিছু লোক যে ভারত থেকে এসেছিল সে বিষয়ে নাকি কোন সন্দেহের অবকাশ নেই । রোমানি সম্প্রদায়ের ভাষার সংগে উত্তরভারতের ইন্দো- ইউরোপিয়ান ভাষার সাদৃশ্য আছে । ঐতিহাসিকদের অনুমান - পনের শ' বছর আগে জিপসিরা মিশর থেকে ইউরোপ পাড়ি দেয় । এই ভবঘুরে লোকগুলো স্বভাবতই মানুষের মনে কৌতূহল জাগায় । আর কৌতূহল উসকে দেওয়ার মতো মাল মশলাও জিপসিদের মধ্যে যথেষ্ট পরিমানে ছিল । তারা লোকের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে নির্ভুল নিদান হাঁকত । এরা নাকি black magic , তন্ত্রমন্ত্র ইত্যাদি জানত । আবার বাচ্চা চুরি সমেত সাধারণ চুরি ও লোক ঠকানোর অভিযোগও এদের বিরুদ্ধে শোনা যায় ।
কিন্তু সব অভিযোগ একদিন কর্পূরের মতো উবে গেল যখন রানি ভিক্টোরিয়ার আমলে ম্যাথু আর্নল্ড নামে এক খ্যাতনামা ইংরেজ কবি The Scholar Gypsy নামে একটি সুদীর্ঘ কবিতা লিখে ফেললেন । জিপসি মিথে বুঁদ হয়ে যাওয়া এক অক্সফোর্ড স্কলার বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে একদিন পথে বেরিয়ে পড়ে । যে-সব পথ প্রান্তর ঘুরে সে অনুসন্ধান চালায় তার রোমান্টিক বর্ণনা এক কথায় তুলনাহীন সাহিত্য সম্পদ । ঘুরতে ঘুরতে একদিন সে জানতে পারে , জিপসিরা নাকি মানুষের মস্তিষ্ক বা চিন্তাস্রোত যেমন খুশি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে । তখন থেকে জিপসি স্কলারের জীবনের মিশন হয়ে দাঁডাল : জিপসিদের জ্ঞানগরিমা ও অতিমানবীয় শক্তির হদিশ পেতে হবে এবং বিশ্ববাসীদের জানাতে হবে ।
এমনি করে ঘুরতে ঘুরতে সে নিজেই একদিন জিপসিদের দলে ভিড়ে গেল । কেউ কেউ নাকি তাকে তাপ্পি দেওয়া জামা জুতো টুপি পরা অবস্থায় দেখেছে । বলা বাহুল্য , অক্সফোর্ডে আর তার কোনদিন ফেরা হয় নি ।
কবিদের কি অসীম ক্ষমতা দেখুন ! জিপসিদের বিরুদ্ধে যুগ যুগ ধরে জমে থাকা নিন্দা অপবাদ একটিমাত্র কবিতার জোরে পুরোপুরি হাওয়া !

Comments

Popular posts from this blog

রবীন্দ্রনাথের বুদ্ধ পূজা

উনবিংশ শতকের মনীষীদের মধ্যে স্বামী বিবেকান্দ ও রবীন্দ্রনাথ গৌতম বুদ্ধের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল ছিলেন । বৌদ্ধ ধর্ম ভারতে প্রায় বিলুপ্ত হলেও বুদ্ধদেব কিন্তু হিন্দু অবতার বরিষ্ঠদের একজন । তাঁর জীবন ও বাণী সর্ব যুগের আদর্শ হতে পারে । সেই মহতী বাণী সমগ্রের সারমর্ম বিধৃত আছে চারটি শব্দের মধ্যে : মৈত্রী , করুণা, মুদিতা ও উপেক্ষা । প্রতিদিনের জীবন যাত্রায় এই চারটি গুণ অনুসৃত হলে মানুষ তার ক্ষুদ্র সত্তা অতিক্রম করে মহাত্ম্যা হবে , পুনর্জন্মের দুর্ভোগ ভুগতে হবে না ।ব্যাপারটা একটু বিশদ করি । আমরা সাধারণ মানুষরা আলাদা আলাদা সংসার পেতে সুখের সন্ধানে মেতে উঠি । এটা চাই , ওটা চাই - চাওয়ার শেষ নেই ! এই যে সর্বগ্রাসী অভিলাষ , এটাই সকল দু:খের মূল । তাই বুদ্ধ বললেন ," কামনা উপেক্ষা কর । হৃদয়ে সদা বহমান হোক মৈত্রী ও করুণা ধারা । সকলকে আপন কর । শুধু মানুষ নয় , মনুষ্যেতর প্রাণীকুলকেও আপন কর । এই অবাধ সেবা ধর্মের আচরণের ফলে মানুষ মহামানব হবে যা দেবত্ব প্রাপ্তির চেয়েও বড ।সেই অবস্থায় এক অনির্বচনীয় প্রশান্তিতে তার মুখমণ্ডল শোভিত হবে । এরই নাম মুদিতা । এই অপার্থিব রূপই পরিলক্ষিত হয়...

শব্দের মন মাতানো ইতিহাস - একিলিস ও হেক্টরের দ্বন্দ্ব

Achelles' heel -এই ইডিয়ামের অর্থ: কারুর শারীরিক বা চারিত্রিক দুর্বলতার জায়গা ।একিলিস ছিলেন অন্যতম প্রধান গ্রিক বীরদের মধ্যে একজন । কিন্তু তার পায়ের গোডালি ছিল খুব দুর্বল । কেন দুর্বল তা জানতে হলে দুর্যোধনের কাহিনি উঠবেই । কুরু-পাণ্ডবের যুদ্ধ যখন দ্রুত ভয়ংকর পরিণতির দিকে এগুচ্ছে-শতপুত্রের মধ্যে অনেকেই নিহত , তখন গান্ধারী প্রিয় পুত্র দুর্যোধনকে অন্তত বাঁচিয়ে রাখার উপায় ভাবলেন । তিনি পুত্রকে বললেন গোপনে স্নান সেরে নিরাভরণ নিরাবরন দেহে তাঁর সামনে হাজির হতে । গান্ধারী মনে মনে ঠিকক করেছেন তাঁর সাধনা- লব্ধ শক্তি দিয়ে দুর্যোধনের শরীর দুর্ভেদ্য করে দেবেন । শুধু তো একবার চোখ খুলে তাকানোর অপেক্ষা!তাঁর মনের কথা টের পেয়ে শ্রীকৃষ্ণ এক ফাঁকে দুর্যোধনের কানে মন্তর দিলেন: যুবাপুরুষ তুমি ,মায়ের সামনে উলঙ্গ হয়ে দাঁডাবে? লজ্জার মাথা খেয়েছ ? দুর্যোধন তখন একখণ্ড লজ্জানিবারনী বস্ত্র নিম্নাঙ্গে জডিয়ে মায়ের সামনে এল । মা চোখের বাঁধন খুলে তাকানো মাত্র বস্ত্রাবৃত জায়গাটুকু ছাডা দুর্যোধনের বাকি শরীর লৌহ- কঠিন হয়ে গেল । কিন্তু ক্ষতি যা হওয়ার তা হয়ে গেছে । পরের ঘটনা আমাদের সবার ...

যোগ বিষয়ে ব্যতিক্রমী ভাবনা

২১শে জুন বিশ্ব যোগ দিবস । যোগের মাহাত্ম্য ও ভারতের অবদান নিয়ে এতটাই প্রচার চলছে যে কিছু কথা আপনার আমার কানে ঢুকবেই । এই মূহুর্তে আমার নাতনি সেই বহুশ্রুত গানটা গাইছে - বিশ্বসাথে যোগে যেথায় বিহারো ....." এ গান আমার ছেলেও গেয়েছে তার ছেলেবেলায় । তখন ততটা মনোযোগ দিই নি । আজ আমি তাক থেকে গীতবিতান নামিয়ে গানটা বার করে পড়লাম । আমার তাৎক্ষণিক অনুভূতি আপনাদের সাথে ভাগ করে নিচ্ছি । কালজয়ী কবিরা যেহেতু স্থান কাল পাত্রপাত্রী ও রাজনীতির ঊর্ধ্বে , তাই আশা করি আপনাদেরও ভাল লাগতে পারে । সকলেই জানেন, যোগের অর্থ - চঞ্চল মনের গতি রোধ করে ধ্যেয় বস্তু বা সত্ত্বার সঙ্গে একীভূত হওয়া । কিন্তু লক্ষ্য করুন, আলোচ্য গানের বিশ্বপিতা নিজেই যুক্ত হচ্ছেন বিশ্বের সাথে ! শাস্ত্রে আছে - ভক্ত ভগবানকে খোঁজে । এখানে ভক্তের কিন্তু আলাদা স্টেটাস বা প্রিভিলেজ নেই । ভগবান সকলকেই আপন করে নিতে নিজে এগিয়ে এসেছেন । কবিও সাধারণের মধ্যে থেকেই ঈশ্বরের সাথে যুক্ত হতে চাইছেন । দ্বিতীয়ত দেখুন , ধ্যান সম্পর্কে আমাদের প্রচলিত ধারণা হচ্ছে - মনে বনে কোণে - এই তিনটে ধ্যানের উপযুক্ত জায়গা । রবীন্দ্রনাথ বলিষ্ঠ প্...