Skip to main content

শব্দের মন মাতানো ইতিহাস : প্রসঙ্গ-ডেসিবেল

প্রতি বছর পুজো আসে রাশি রাশি চেনা অনুষঙ্গ নিয়ে । একদিকে যেমন আছে শিউলির মিষ্টি গন্ধ , কাশফুল , পদ্ম , সাদা মেঘ , নতুন পোশাক, ঢাকের বাদ্যি, ছুটি ইত্যাদি তেমনি অন্যদিকে আছে গান ও স্তোত্রপাঠের নামে কানফাটানো আওযাজের আয়োজন! সম্মিলিত শব্দ সম্ভার ক্রমে শ্রুতিমধুর থেকে শ্রুতিকটু হযে দূষণের উৎস হযে ওঠে। এই অবস্থা থেকে পরিবেশকে রক্ষা করার জন্য মহামান্য উচ্চ আদালত বিধি নিষেধ আরোপ করেছে-৬৫ডেসিবেলের বেশি জোরে শব্দ উৎপাদন করা চলবে না ।
এরকম আরো অনেক ভালো ভালো আইন দেশে আছে। কিন্তু আইন ভঙ্গকারীদের শাস্তি দেওযার ভার যাদের হাতে ন্যস্ত তারা সচরাচর এসব বিচ্যুতি না দেখার ভাণ করে থাকে। তাই নাগরিকদের কাছে আইন থাকা না থাকা সমান যাহোক আদালতের দৌলতে ডেসিবেল শব্দটার সঙ্গে সাধারণ মানুষ বেশ ভালভাবেই পরিচিত। আমরাও তাই দেখে নিই ডেসিবেল ও তার স্বজনদের জন্ম পরিচয়। Decibel হচ্ছে শব্দ মাপার শ্রবণগ্রাহ্য ক্ষুদ্রতম একক। এর দুটো ভাগ: deci + bel. ডেসি মানে দশ ভাগের এক ভাগ আর বেল শব্দটা এসেছে টেলিফোনের আবিষ্কর্তা স্বনামধন্য বৈজ্ঞানিক আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল নাম থেকে। আমরা জানি টেলি মানে দূর আর ফোন মানে শব্দ (দূরভাষ যন্ত্র ) । স্পষ্টই বোঝা যায় এখানে মূখ্যত গ্রাহাম সাহেবের প্রতি সম্মান জানানোর জন্যই তাঁর পদবীকে ডেসির সাথে জুডে দেওয়া হয়েছে।
মানুষের শ্রবণ শক্তি সীমিত। বেশি frequency-র তীব্র শব্দ যেমন তার কাছে দুর্বোধ্য তেমনি অতি মৃদু আওয়াজও তার কান ধরতে পারে না। সাপ , কুকুর , বাদুর, হাতি ইত্যাদি পশু পাখি যা পারে মানুষের তা সাধ্যাতীত। ডেসিবেলের নানা ভাগের সাথে যন্ত্রসঙ্গীতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ওয়াকিবহাল থাকতে পারেন, কিন্তু সাধারণ মানুষ নয়। যেমন ধরুন বেহালা বাদ্যযন্ত্র যে খাদের দিকে ২৫ ডিবি পর্যন্ত নামতে পারে এবং ওপরের দিকে ১০০ ডিবি পর্যন্ত উঠতে পারে সেটা তো সাধারণ মানুষের জানা বা বোঝার পরিধির মধ্যে পড়ে না। সাধারণ মানুষ শুধু এইটুকু জানে যে " loudness-এর দুটো ভাগ-high decibel ও low decibel.
Decibel-এর মতো আমরা decimal শব্দের সঙ্গেও পরিচিত। এই শব্দে বেল সাহেব নেই মানে কোন আওয়াজও নেই! আছে অংকের ভগ্নাংশের হিসেব-এক দশমাংশ ধরে। Decimal-এর মতো দেখতে ওদের জ্ঞাতিগোষ্ঠীর একটি শব্দ হচ্ছে-decimate. অতি ভয়ংকর শব্দ এটি। এর আদি অর্থ ছিল- বেছে নেওয়া দশজনের মধ্যে একটিকে টেনে এনে হত্যা করা। খুনখারাপি যেহেতু এখন জলভাতের মতো তাই শব্দটা বর্তমানে "wholesale" এর মাত্রা পেয়েছে। এখনকার অর্থ: বাছাবাছি না করে সবকটাকে একসাথে কোতল কর! রক্তবীজের শেষ রেখো না-destroy totally !

Comments

Popular posts from this blog

রবীন্দ্রনাথের বুদ্ধ পূজা

উনবিংশ শতকের মনীষীদের মধ্যে স্বামী বিবেকান্দ ও রবীন্দ্রনাথ গৌতম বুদ্ধের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল ছিলেন । বৌদ্ধ ধর্ম ভারতে প্রায় বিলুপ্ত হলেও বুদ্ধদেব কিন্তু হিন্দু অবতার বরিষ্ঠদের একজন । তাঁর জীবন ও বাণী সর্ব যুগের আদর্শ হতে পারে । সেই মহতী বাণী সমগ্রের সারমর্ম বিধৃত আছে চারটি শব্দের মধ্যে : মৈত্রী , করুণা, মুদিতা ও উপেক্ষা । প্রতিদিনের জীবন যাত্রায় এই চারটি গুণ অনুসৃত হলে মানুষ তার ক্ষুদ্র সত্তা অতিক্রম করে মহাত্ম্যা হবে , পুনর্জন্মের দুর্ভোগ ভুগতে হবে না ।ব্যাপারটা একটু বিশদ করি । আমরা সাধারণ মানুষরা আলাদা আলাদা সংসার পেতে সুখের সন্ধানে মেতে উঠি । এটা চাই , ওটা চাই - চাওয়ার শেষ নেই ! এই যে সর্বগ্রাসী অভিলাষ , এটাই সকল দু:খের মূল । তাই বুদ্ধ বললেন ," কামনা উপেক্ষা কর । হৃদয়ে সদা বহমান হোক মৈত্রী ও করুণা ধারা । সকলকে আপন কর । শুধু মানুষ নয় , মনুষ্যেতর প্রাণীকুলকেও আপন কর । এই অবাধ সেবা ধর্মের আচরণের ফলে মানুষ মহামানব হবে যা দেবত্ব প্রাপ্তির চেয়েও বড ।সেই অবস্থায় এক অনির্বচনীয় প্রশান্তিতে তার মুখমণ্ডল শোভিত হবে । এরই নাম মুদিতা । এই অপার্থিব রূপই পরিলক্ষিত হয়...

শব্দের মন মাতানো ইতিহাস - একিলিস ও হেক্টরের দ্বন্দ্ব

Achelles' heel -এই ইডিয়ামের অর্থ: কারুর শারীরিক বা চারিত্রিক দুর্বলতার জায়গা ।একিলিস ছিলেন অন্যতম প্রধান গ্রিক বীরদের মধ্যে একজন । কিন্তু তার পায়ের গোডালি ছিল খুব দুর্বল । কেন দুর্বল তা জানতে হলে দুর্যোধনের কাহিনি উঠবেই । কুরু-পাণ্ডবের যুদ্ধ যখন দ্রুত ভয়ংকর পরিণতির দিকে এগুচ্ছে-শতপুত্রের মধ্যে অনেকেই নিহত , তখন গান্ধারী প্রিয় পুত্র দুর্যোধনকে অন্তত বাঁচিয়ে রাখার উপায় ভাবলেন । তিনি পুত্রকে বললেন গোপনে স্নান সেরে নিরাভরণ নিরাবরন দেহে তাঁর সামনে হাজির হতে । গান্ধারী মনে মনে ঠিকক করেছেন তাঁর সাধনা- লব্ধ শক্তি দিয়ে দুর্যোধনের শরীর দুর্ভেদ্য করে দেবেন । শুধু তো একবার চোখ খুলে তাকানোর অপেক্ষা!তাঁর মনের কথা টের পেয়ে শ্রীকৃষ্ণ এক ফাঁকে দুর্যোধনের কানে মন্তর দিলেন: যুবাপুরুষ তুমি ,মায়ের সামনে উলঙ্গ হয়ে দাঁডাবে? লজ্জার মাথা খেয়েছ ? দুর্যোধন তখন একখণ্ড লজ্জানিবারনী বস্ত্র নিম্নাঙ্গে জডিয়ে মায়ের সামনে এল । মা চোখের বাঁধন খুলে তাকানো মাত্র বস্ত্রাবৃত জায়গাটুকু ছাডা দুর্যোধনের বাকি শরীর লৌহ- কঠিন হয়ে গেল । কিন্তু ক্ষতি যা হওয়ার তা হয়ে গেছে । পরের ঘটনা আমাদের সবার ...

যোগ বিষয়ে ব্যতিক্রমী ভাবনা

২১শে জুন বিশ্ব যোগ দিবস । যোগের মাহাত্ম্য ও ভারতের অবদান নিয়ে এতটাই প্রচার চলছে যে কিছু কথা আপনার আমার কানে ঢুকবেই । এই মূহুর্তে আমার নাতনি সেই বহুশ্রুত গানটা গাইছে - বিশ্বসাথে যোগে যেথায় বিহারো ....." এ গান আমার ছেলেও গেয়েছে তার ছেলেবেলায় । তখন ততটা মনোযোগ দিই নি । আজ আমি তাক থেকে গীতবিতান নামিয়ে গানটা বার করে পড়লাম । আমার তাৎক্ষণিক অনুভূতি আপনাদের সাথে ভাগ করে নিচ্ছি । কালজয়ী কবিরা যেহেতু স্থান কাল পাত্রপাত্রী ও রাজনীতির ঊর্ধ্বে , তাই আশা করি আপনাদেরও ভাল লাগতে পারে । সকলেই জানেন, যোগের অর্থ - চঞ্চল মনের গতি রোধ করে ধ্যেয় বস্তু বা সত্ত্বার সঙ্গে একীভূত হওয়া । কিন্তু লক্ষ্য করুন, আলোচ্য গানের বিশ্বপিতা নিজেই যুক্ত হচ্ছেন বিশ্বের সাথে ! শাস্ত্রে আছে - ভক্ত ভগবানকে খোঁজে । এখানে ভক্তের কিন্তু আলাদা স্টেটাস বা প্রিভিলেজ নেই । ভগবান সকলকেই আপন করে নিতে নিজে এগিয়ে এসেছেন । কবিও সাধারণের মধ্যে থেকেই ঈশ্বরের সাথে যুক্ত হতে চাইছেন । দ্বিতীয়ত দেখুন , ধ্যান সম্পর্কে আমাদের প্রচলিত ধারণা হচ্ছে - মনে বনে কোণে - এই তিনটে ধ্যানের উপযুক্ত জায়গা । রবীন্দ্রনাথ বলিষ্ঠ প্...