Skip to main content

শব্দের মন মজানো ইতিহাস : Stoicism


আধুনিক জীবনযাত্রায় পাস ওয়ার্ডের ব্যাপকতা ও অপরিহার্যতা দেখে মনে হতে পারে ,মানবজাতির পূর্বপুরুষরা বুঝি এ ব্যাপারে মোটেই অবহিত বা অভ্যস্ত ছিল না । এ ধারণা কিন্তু ভুল । এখানে প্রমাণ হিসেবে দুটো মাত্র উদাহরণ দেওয়া হ'ল । একটি Old Testament থেকে অর্থাৎ যিশুর জন্মের আগে, আরেকটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার রেকর্ড থেকে ।
প্রাচীন বাইবেলের একজায়গায় Gileadites দের সাথে Ephramaimites দের যুদ্ধর কথা আছে । সেই যুদ্ধ শেষোক্ত দলের পরাজয় হয় । এক পলাতক Ephraimites কে জর্ডানের পথে দেখে তাকে থামিয়ে জিজ্ঞেস করা হয় সে Ephraimite কি না । সে মিথ্যে করে না বলে । তখন তাকে স্বদেশী না বিদেশী পরখ করার জন্য বলা হয় -- বল দেখি shibboleth ! শ্যামবাজারের শশীবাবুরমতো যারা তালব্য শ- য়ের জায়গায় দন্ত্য- স উচ্চারণ করেন ,তাদের মতো এই পলাতকও উচ্চারণ করল - sibboleth! আর তৎক্ষণাৎ বেচারা ধরা পড়ে গেল এবং তাকে কেতল করা হ'ল ।
শিবলেথ শব্দটা হিব্রু ভাষা থেকে জাত । এর আদি অর্থ শস্যশীষ বা স্রোতস্বিনী । কিন্তু পরিবর্তিত অর্থ হচ্ছে pass word বা test word.
দ্বিতীয় pass word testing এর ঘটনাটা ঘটে ২০ জানুয়ারি ,১৯৪২ সালে । জায়গাটা ছিল ফিলিপ্পিনস্ এর বাতান উপদ্বীপ । আমেরিকান প্রহরীদের সতর্ক দৃষ্টি এডিয়ে জাপানিরা কায়দা করে ঢুকে পডছে দেশের অভ্যন্তরে । তাই কড়াই পাহারার ব্যাবস্থা । জাপানিরা L বা ল'য়ের উচ্চারণ ঠিকঠাক করতে পারে না। । ল'য়ের বদলে বলে র ! যেমন slogan এর উচ্চারণ করে surrugan! এই খবরটা মাথায় রেখে এক মার্কিন অফিসার পাস ওয়ার্ড হিসেবে বেছে নেয় --এই শব্দটি--lallapaloosa! এইবার নিজেকে ফিলিপ্পো বলে যেই এক জাপানি সৈনিক ভেতরে ঢুকতে গেছে ,তাকে থামিয়ে বলা হ'ল -- উচ্চারণ করতো দেখি 'lallapaloosa ! সে বলে উঠল -'rarraparoosa !' আর যাবে কোথায় ! টেস্টে ফেল করে বেচারা বন্দী হতে গেল । শিবলেথ শব্দটি পাসওয়ার্ড হিসেবে জীর্ণ হয়ে ক্লিশে হয়ে গেছে আজকাল শব্দটা কোন কোন পার্টি বা সম্প্রদায়ের লোক শ্লোগান বা ক্যাচওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করে ।
প্রাচীন গ্রীসদেশ শুধু বীরপুরুষদেরই জন্ম দেয় নি প্লেটো ,অ্যারিস্টটল ,সক্রেটিসের মতো জগৎখ্যাত বহু দার্শনিকেরও জন্ম দিয়েছে। আজ আমরা স্মরণ করব এক দার্শনিককে যাঁর তত্ত্বের সঙ্গে জড়িয়ে আছে একটি মজার কাহিনি। এই দার্শনিকের নাম Zeno . জীবনে কী করে সুখী হওয়া যায় তার গোপন কথা তিনি প্রচার করতেন -কোন সভা ডেকে নয় ,শিক্ষালয়ে নয় বা বই লিখেও নয় ! তিনি তাঁর বাড়ির সামনের গাডি বারান্দায়( porch) দাঁডিয়ে থাকতেন এবং লোক দেখলেই বক্তৃতা শুরু করতেন ।বার্ণার্ড শয়ের মতো তিনি নাছোডবান্দা বক্তা ছিলেন । শ্রোতা না জুটলেও ধৈর্য হারাতেন না ।তাঁর বক্তব্য:-সুখী হতে চাও তো ভাবাবেগে লাগাম লাগাও । বেশি সুখে ভেসে যেও না। অতি দু:খেও বিচলিত হয়ো না ।দু:খকেও ভগবানের দান ভেবে মুখ বুজে সইতে হবে ।
জেনোর এই মতবাদের সঙ্গে শ্রীকৃষ্ণের মুখ নি:সৃত গীতার একটি শ্লোকের আশ্চর্য মিল !শ্লোকের প্রথমার্ধটা এরকম:- " দু:খেষ্বনুদ্বিগ্নমনা: সুখেষু বিগতস্পৃহ: "
ক্রমে তাঁর মতবাদ জনপ্রিয় হয় ।সেটা বোঝা যায় গ্রিকদের জাতীয় চরিত্র লক্ষ করে ।Austerity & hardship - এই দুটো জিনিসই তাদের অস্থি মজ্জায় মিশে গিয়েছিল।
জেনোপন্থীদের বলে stoic - আর মতবাদের নাম Stoicism .কথাটার মূল হচ্ছে Stoa -এর বাংলা প্রতিশব্দ গাডিবারান্দা যার ওপর দাঁডিয়ে জেনো বক্তৃতা করতেন ।দেখুন কি চমৎকারভাবে একটা ঘরোয়া বক্তৃতাস্থল ভাষা ইতিহাসে শাশ্বত আসন পেয়ে গেল !
প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখি ,বর্তমান যুগে stoicism এর আর কদর নেই ।এখনকার মত হচ্ছে- আবেগ অবদমন একদম চলবে না ।সেটা নাকি স্বাস্হ্য ও স্বাধীনতা - ঊভয়ের পরিপন্থী !

Comments

Popular posts from this blog

রবীন্দ্রনাথের বুদ্ধ পূজা

উনবিংশ শতকের মনীষীদের মধ্যে স্বামী বিবেকান্দ ও রবীন্দ্রনাথ গৌতম বুদ্ধের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল ছিলেন । বৌদ্ধ ধর্ম ভারতে প্রায় বিলুপ্ত হলেও বুদ্ধদেব কিন্তু হিন্দু অবতার বরিষ্ঠদের একজন । তাঁর জীবন ও বাণী সর্ব যুগের আদর্শ হতে পারে । সেই মহতী বাণী সমগ্রের সারমর্ম বিধৃত আছে চারটি শব্দের মধ্যে : মৈত্রী , করুণা, মুদিতা ও উপেক্ষা । প্রতিদিনের জীবন যাত্রায় এই চারটি গুণ অনুসৃত হলে মানুষ তার ক্ষুদ্র সত্তা অতিক্রম করে মহাত্ম্যা হবে , পুনর্জন্মের দুর্ভোগ ভুগতে হবে না ।ব্যাপারটা একটু বিশদ করি । আমরা সাধারণ মানুষরা আলাদা আলাদা সংসার পেতে সুখের সন্ধানে মেতে উঠি । এটা চাই , ওটা চাই - চাওয়ার শেষ নেই ! এই যে সর্বগ্রাসী অভিলাষ , এটাই সকল দু:খের মূল । তাই বুদ্ধ বললেন ," কামনা উপেক্ষা কর । হৃদয়ে সদা বহমান হোক মৈত্রী ও করুণা ধারা । সকলকে আপন কর । শুধু মানুষ নয় , মনুষ্যেতর প্রাণীকুলকেও আপন কর । এই অবাধ সেবা ধর্মের আচরণের ফলে মানুষ মহামানব হবে যা দেবত্ব প্রাপ্তির চেয়েও বড ।সেই অবস্থায় এক অনির্বচনীয় প্রশান্তিতে তার মুখমণ্ডল শোভিত হবে । এরই নাম মুদিতা । এই অপার্থিব রূপই পরিলক্ষিত হয়...

শব্দের মন মাতানো ইতিহাস - একিলিস ও হেক্টরের দ্বন্দ্ব

Achelles' heel -এই ইডিয়ামের অর্থ: কারুর শারীরিক বা চারিত্রিক দুর্বলতার জায়গা ।একিলিস ছিলেন অন্যতম প্রধান গ্রিক বীরদের মধ্যে একজন । কিন্তু তার পায়ের গোডালি ছিল খুব দুর্বল । কেন দুর্বল তা জানতে হলে দুর্যোধনের কাহিনি উঠবেই । কুরু-পাণ্ডবের যুদ্ধ যখন দ্রুত ভয়ংকর পরিণতির দিকে এগুচ্ছে-শতপুত্রের মধ্যে অনেকেই নিহত , তখন গান্ধারী প্রিয় পুত্র দুর্যোধনকে অন্তত বাঁচিয়ে রাখার উপায় ভাবলেন । তিনি পুত্রকে বললেন গোপনে স্নান সেরে নিরাভরণ নিরাবরন দেহে তাঁর সামনে হাজির হতে । গান্ধারী মনে মনে ঠিকক করেছেন তাঁর সাধনা- লব্ধ শক্তি দিয়ে দুর্যোধনের শরীর দুর্ভেদ্য করে দেবেন । শুধু তো একবার চোখ খুলে তাকানোর অপেক্ষা!তাঁর মনের কথা টের পেয়ে শ্রীকৃষ্ণ এক ফাঁকে দুর্যোধনের কানে মন্তর দিলেন: যুবাপুরুষ তুমি ,মায়ের সামনে উলঙ্গ হয়ে দাঁডাবে? লজ্জার মাথা খেয়েছ ? দুর্যোধন তখন একখণ্ড লজ্জানিবারনী বস্ত্র নিম্নাঙ্গে জডিয়ে মায়ের সামনে এল । মা চোখের বাঁধন খুলে তাকানো মাত্র বস্ত্রাবৃত জায়গাটুকু ছাডা দুর্যোধনের বাকি শরীর লৌহ- কঠিন হয়ে গেল । কিন্তু ক্ষতি যা হওয়ার তা হয়ে গেছে । পরের ঘটনা আমাদের সবার ...

যোগ বিষয়ে ব্যতিক্রমী ভাবনা

২১শে জুন বিশ্ব যোগ দিবস । যোগের মাহাত্ম্য ও ভারতের অবদান নিয়ে এতটাই প্রচার চলছে যে কিছু কথা আপনার আমার কানে ঢুকবেই । এই মূহুর্তে আমার নাতনি সেই বহুশ্রুত গানটা গাইছে - বিশ্বসাথে যোগে যেথায় বিহারো ....." এ গান আমার ছেলেও গেয়েছে তার ছেলেবেলায় । তখন ততটা মনোযোগ দিই নি । আজ আমি তাক থেকে গীতবিতান নামিয়ে গানটা বার করে পড়লাম । আমার তাৎক্ষণিক অনুভূতি আপনাদের সাথে ভাগ করে নিচ্ছি । কালজয়ী কবিরা যেহেতু স্থান কাল পাত্রপাত্রী ও রাজনীতির ঊর্ধ্বে , তাই আশা করি আপনাদেরও ভাল লাগতে পারে । সকলেই জানেন, যোগের অর্থ - চঞ্চল মনের গতি রোধ করে ধ্যেয় বস্তু বা সত্ত্বার সঙ্গে একীভূত হওয়া । কিন্তু লক্ষ্য করুন, আলোচ্য গানের বিশ্বপিতা নিজেই যুক্ত হচ্ছেন বিশ্বের সাথে ! শাস্ত্রে আছে - ভক্ত ভগবানকে খোঁজে । এখানে ভক্তের কিন্তু আলাদা স্টেটাস বা প্রিভিলেজ নেই । ভগবান সকলকেই আপন করে নিতে নিজে এগিয়ে এসেছেন । কবিও সাধারণের মধ্যে থেকেই ঈশ্বরের সাথে যুক্ত হতে চাইছেন । দ্বিতীয়ত দেখুন , ধ্যান সম্পর্কে আমাদের প্রচলিত ধারণা হচ্ছে - মনে বনে কোণে - এই তিনটে ধ্যানের উপযুক্ত জায়গা । রবীন্দ্রনাথ বলিষ্ঠ প্...