Skip to main content

"স্বাধীনতা " সপ্তাহের নিবেদন

শব্দ হচ্ছে চিন্তার বাহক l সভ্যতার একটা বড় পরিচয় হচ্ছে এই চিন্তাস্রোতকে উপযুক্ত ভাষা বা চিত্রের মাধ্যমে প্রকাশ করা l যে দেশের ভাষা যত বেশি শব্দে র অধিকারী, সে দেশ তত বেশি ভাব বা চিন্তাসম্পদে ধনী l আমাদের অতীত সভ্যতা ধর্ম , দর্শন ,সাহিত্যে গর্ব করার মতো ঐশ্বর্যের অধিকারী l কিন্তু বিজ্ঞান , প্রযুক্তিবিদ্যা চিকিৎসাশাস্ত্র , সমাজবিজ্ঞান ,মনোবিজ্ঞান ,রাষ্ট্রবিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ে বহু দেশের তুলনায় পিছিয়ে l উদাহরণস্বরূপ আমরা রাজনীতিঘেঁষা তিনটে শব্দ বেছে নিলাম :
1. Liberty 2.Freedom 3.Independence - এই তিনটি শব্দের জন্য আমাদের দেশে সংস্কৃত ভিত্তিক ভাষা ভাণ্ডারে দেখতে পাই শুধু স্বাধীনতা বা স্বতন্ত্রতা l
উপরের শব্দ তিনটি সমার্থক হলেও তাদের ভেতর সুক্ষ্ম ফারাক আছে l Freedom বলতে বোঝায় ক্ষমতা বা অধিকার যার বলে আমরা যে কোন মতামত, মনোভাব ব্যক্ত করতে পারি lকোন বহির্শক্তির নিয়ন্ত্রন আমাদের ওপর থাকবে না l
Liberty ও freedom এর মধ্যে আপাতদৃষ্টিতে কোন পার্থক্য নেই l তবে হ্যাঁ, liberty কিন্তু সব সময় কোন না কোন উৎস থেকে প্রাপ্ত বা অর্জিত এবং এই স্বাধীনতা ভোগ করার সময় কখনই মাত্রাজ্ঞান হারানো বাঞ্ছনীয় নয় l অক্সফোর্ড অভিধান লিখেছে : right/ privilege to act as one pleases- কিন্তু সেই সাথে জুড়ে দিয়েছে: প্রিভিলেজ প্রাপ্ত ব্যক্তি "disrespectful remark or act " করতে পারে l সেই সাথে আরো লেখা আছে : ( may ) behave in an excessive way "
ফরাসিবিপ্লবের পর যে তিনটে শব্দ সকলের সামনে উজ্জ্বল তারার মতো
ফুটে উঠেছিল তার প্রথমটি হচ্ছে Liberty. বাস্তিল দুর্গের পতনের পর লিবার্টির স্বাদ অনুভব করে ফ্রান্সের আমজনতা যে বীভৎস ক্রিয়াকলাপ
চালিয়েছিল তা স্মরণ করলেই "excessive " কথাটার তাৎপর্য বোঝা যাবে l
Independence শব্দটা নিয়ে কোন ধোঁয়াশা নেইl এখানে পরিস্কারভাবে বিদেশী শাসন বা অন্যের প্রতি dependence এর সমাপ্তি বোঝায় l সেজন্য freedom fighters-রাসংগ্রাম করে যা লাভ করে তা হচ্ছে Independence-এই মহাপ্রাপ্তির পর হাতে আসে ফ্রিডম বা লিবার্টি l
আমরা ইংরেজের হাত থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পর সংবিধান পেলাম l
সংবিধানের প্রস্তাবনার (Preamble ) দিকে তাকালে প্রথমেই চোখে পড়বে :
Liberty of thought ,expression , belief , faith and worship "
কথাগুলো দেখেই মনপ্রাণ জুড়িয়ে যায়l কিন্তু আনন্দের আতিশয্য নিমেষে আতঙ্কে পরিণত হয় যখনলিবার্টির " excesses " চোখে পড়ে ! অন্যান্য লিবার্টির কথা ছেড়ে দিলামl শুধু ধর্মীয় উৎসবের দিনগুলোর দিকে তাকান l শব্দ দূষণ, ট্রাফিক জ্যাম , এবং শোভাযাত্রাকেন্দ্রিক কদর্যতা , এমনকি সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষও অতি পরিচিত চিত্র !

Comments

Popular posts from this blog

রবীন্দ্রনাথের বুদ্ধ পূজা

উনবিংশ শতকের মনীষীদের মধ্যে স্বামী বিবেকান্দ ও রবীন্দ্রনাথ গৌতম বুদ্ধের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল ছিলেন । বৌদ্ধ ধর্ম ভারতে প্রায় বিলুপ্ত হলেও বুদ্ধদেব কিন্তু হিন্দু অবতার বরিষ্ঠদের একজন । তাঁর জীবন ও বাণী সর্ব যুগের আদর্শ হতে পারে । সেই মহতী বাণী সমগ্রের সারমর্ম বিধৃত আছে চারটি শব্দের মধ্যে : মৈত্রী , করুণা, মুদিতা ও উপেক্ষা । প্রতিদিনের জীবন যাত্রায় এই চারটি গুণ অনুসৃত হলে মানুষ তার ক্ষুদ্র সত্তা অতিক্রম করে মহাত্ম্যা হবে , পুনর্জন্মের দুর্ভোগ ভুগতে হবে না ।ব্যাপারটা একটু বিশদ করি । আমরা সাধারণ মানুষরা আলাদা আলাদা সংসার পেতে সুখের সন্ধানে মেতে উঠি । এটা চাই , ওটা চাই - চাওয়ার শেষ নেই ! এই যে সর্বগ্রাসী অভিলাষ , এটাই সকল দু:খের মূল । তাই বুদ্ধ বললেন ," কামনা উপেক্ষা কর । হৃদয়ে সদা বহমান হোক মৈত্রী ও করুণা ধারা । সকলকে আপন কর । শুধু মানুষ নয় , মনুষ্যেতর প্রাণীকুলকেও আপন কর । এই অবাধ সেবা ধর্মের আচরণের ফলে মানুষ মহামানব হবে যা দেবত্ব প্রাপ্তির চেয়েও বড ।সেই অবস্থায় এক অনির্বচনীয় প্রশান্তিতে তার মুখমণ্ডল শোভিত হবে । এরই নাম মুদিতা । এই অপার্থিব রূপই পরিলক্ষিত হয়...

শব্দের মন মাতানো ইতিহাস - একিলিস ও হেক্টরের দ্বন্দ্ব

Achelles' heel -এই ইডিয়ামের অর্থ: কারুর শারীরিক বা চারিত্রিক দুর্বলতার জায়গা ।একিলিস ছিলেন অন্যতম প্রধান গ্রিক বীরদের মধ্যে একজন । কিন্তু তার পায়ের গোডালি ছিল খুব দুর্বল । কেন দুর্বল তা জানতে হলে দুর্যোধনের কাহিনি উঠবেই । কুরু-পাণ্ডবের যুদ্ধ যখন দ্রুত ভয়ংকর পরিণতির দিকে এগুচ্ছে-শতপুত্রের মধ্যে অনেকেই নিহত , তখন গান্ধারী প্রিয় পুত্র দুর্যোধনকে অন্তত বাঁচিয়ে রাখার উপায় ভাবলেন । তিনি পুত্রকে বললেন গোপনে স্নান সেরে নিরাভরণ নিরাবরন দেহে তাঁর সামনে হাজির হতে । গান্ধারী মনে মনে ঠিকক করেছেন তাঁর সাধনা- লব্ধ শক্তি দিয়ে দুর্যোধনের শরীর দুর্ভেদ্য করে দেবেন । শুধু তো একবার চোখ খুলে তাকানোর অপেক্ষা!তাঁর মনের কথা টের পেয়ে শ্রীকৃষ্ণ এক ফাঁকে দুর্যোধনের কানে মন্তর দিলেন: যুবাপুরুষ তুমি ,মায়ের সামনে উলঙ্গ হয়ে দাঁডাবে? লজ্জার মাথা খেয়েছ ? দুর্যোধন তখন একখণ্ড লজ্জানিবারনী বস্ত্র নিম্নাঙ্গে জডিয়ে মায়ের সামনে এল । মা চোখের বাঁধন খুলে তাকানো মাত্র বস্ত্রাবৃত জায়গাটুকু ছাডা দুর্যোধনের বাকি শরীর লৌহ- কঠিন হয়ে গেল । কিন্তু ক্ষতি যা হওয়ার তা হয়ে গেছে । পরের ঘটনা আমাদের সবার ...

যোগ বিষয়ে ব্যতিক্রমী ভাবনা

২১শে জুন বিশ্ব যোগ দিবস । যোগের মাহাত্ম্য ও ভারতের অবদান নিয়ে এতটাই প্রচার চলছে যে কিছু কথা আপনার আমার কানে ঢুকবেই । এই মূহুর্তে আমার নাতনি সেই বহুশ্রুত গানটা গাইছে - বিশ্বসাথে যোগে যেথায় বিহারো ....." এ গান আমার ছেলেও গেয়েছে তার ছেলেবেলায় । তখন ততটা মনোযোগ দিই নি । আজ আমি তাক থেকে গীতবিতান নামিয়ে গানটা বার করে পড়লাম । আমার তাৎক্ষণিক অনুভূতি আপনাদের সাথে ভাগ করে নিচ্ছি । কালজয়ী কবিরা যেহেতু স্থান কাল পাত্রপাত্রী ও রাজনীতির ঊর্ধ্বে , তাই আশা করি আপনাদেরও ভাল লাগতে পারে । সকলেই জানেন, যোগের অর্থ - চঞ্চল মনের গতি রোধ করে ধ্যেয় বস্তু বা সত্ত্বার সঙ্গে একীভূত হওয়া । কিন্তু লক্ষ্য করুন, আলোচ্য গানের বিশ্বপিতা নিজেই যুক্ত হচ্ছেন বিশ্বের সাথে ! শাস্ত্রে আছে - ভক্ত ভগবানকে খোঁজে । এখানে ভক্তের কিন্তু আলাদা স্টেটাস বা প্রিভিলেজ নেই । ভগবান সকলকেই আপন করে নিতে নিজে এগিয়ে এসেছেন । কবিও সাধারণের মধ্যে থেকেই ঈশ্বরের সাথে যুক্ত হতে চাইছেন । দ্বিতীয়ত দেখুন , ধ্যান সম্পর্কে আমাদের প্রচলিত ধারণা হচ্ছে - মনে বনে কোণে - এই তিনটে ধ্যানের উপযুক্ত জায়গা । রবীন্দ্রনাথ বলিষ্ঠ প্...