Skip to main content

প্রবাদ নিয়ে বাদ প্রতিবাদ

প্রাক কথন : কিছুদিন আগে ফেসবুকে শব্দের মন মজানো কাহিনি সম্ভার নিয়ে বন্ধুদের সাথে যোগাযোগের একটি সাঁকো বেঁধেছিলাম । পুজোর বাদ্যি বেজে ওঠার পর সে পর্ব স্থগিত করি । পুজো মরশুম শেষ হওয়ার পর আবার ইচ্ছে জাগছে নতুন কোন সওদা নিয়ে বন্ধুদের কাছে হাজির হই !আমার প্রস্তাব - চলুন আমরা প্রচলিত প্রবাদ প্রবচনগুলোকে একটু উল্টে পাল্টে দেখি ।
আমরা সবাই জানি প্রবাদ মানে পরম্পরাগত বাক্য , লোকশ্রুতি বা ব্যবহার- সিদ্ধ চলতি কথা । আমরা ধরেই নিই যে প্রবাদ প্রবচন কালোত্তীর্ণ । তাদের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নাতীত । কিন্তু সত্যিই কি তাই ? প্রবাদ প্রবচন কোন বিশেষ সময়ের সৃষ্টি । সেই সময়ের আর্থ- সামাজিক বা ধর্মীয় প্রেক্ষিত ঐ নির্মিতি প্রক্রিয়ার পেছনে কাজ করেছিল । সুতরাং এটা খুব স্বাভাবিক যে পরিবর্তিত পরিবেশে সেইসব প্রবাদ তাদের প্রাসঙ্গিকতা পুরোপুরি না হলেও আংশিকভাবে হারাতেই পারে । কারণ পরিবর্তন হচ্ছে জগতের নিশ্চিত পরিণতি । যে কোন উক্তিকে শেষ কথা বলে ধরে নিলে চিন্তাশক্তির বহমানতা বিঘ্নিত হয় । নির্বিচারে মেনে নেওয়াটা অভ্যেস হয়ে দাঁড়ায় ।এই জাড্যতা ঝেড়ে ফেলে দিয়ে হোক না একটু বাদ প্রতিবাদ !
নিচের প্রবাদটি দেখুন : ধরি মাছ না ছুঁই পানি : এটি সচরাচর নিন্দার্থে ব্যবহৃত হয় । যেসব লোক বিনা পরিশ্রমে লোভনীয় জিনিসটি আলগোছে তুলে নেয় , তাদের প্রতি এই প্রবাদটি প্রযোজ্য । সংসারে এরকম ওপর চালাকি করে " বস্তু " হাতিয়ে নেওয়ার লোক অসংখ্য ।
একটু তলিয়ে দেখলেই বোঝা যায় প্রবাদটি কিন্তু পুরোপুরি নিন্দনীয় নয় । যদি বুদ্ধি প্রয়োগ করে প্রয়োজনীয় সামগ্রী মেলে , তাহলে ঘাম ঝরাবার দরকার কি ? মানুষ বুদ্ধিমান বলেই না প্রাণীকূলের মধ্যে তার এত কদর ! ভারবাহী পশু গর্দভকে কে প্রশংসা করে ?
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কৃতকুশলীদের সৌজন্যে আজ আমাদের হাতে এসে গেছে আরো আরাম , আরো আনন্দ ,আরো সম্পদ , দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো কত কি ! অচিন্তনীয় এইসব আশীর্বাদ উপভোগ করতে সাধারণ মানুষকে তো " পানি " ঘাঁটতে হয় না । কিছু পয়সা ফেললেই হল ! সমাপ্তি টানার আগে দুই একটা উদাহরণ দেওয়া যাক । বিষয় - বিয়ে বনাম লিভ টুগেদার কনসেপ্ট । দ্বিতীয়টিতে বউ-এর মন যুগিয়ে চলার বালাই নেই । ভার বহনেরও প্রশ্ন নেই । 50 : 50 ! পার্টনার অন্য ধর্মের হলেও ধর্ম পরিবর্তনের বাধ্যবাধকতা নেই । আনুষ্ঠিকতার ঘটা নেই । তাল কেটে গেলে ছাড়াছাড়িতেও হ্যাপা নেই । সবচেয়ে বড় কথা - ডিমোক্লিসের তলোয়ারের মতো ৪৯৮ ধারা সর্বক্ষণ মাথার ওপর ঝুলে থাকে না !
এসব তো গেল বৈষয়িক দিক । আধ্যাত্মিক দিকেও একবার উঁকি মারা যাক । একটা গানের লাইন দুটো দেখুন : আমার যেমন বেণী তেমনি রবে চুল ভিজাব না .........আমি রাঁধিব , বাড়িব , ব্যাঞ্জন বাঁটিব তবু হাঁড়ি ছোঁব না ! ব্যাখ্যা মনে হয় নিষ্প্রয়োজন । ঠাকুরের এই উপদেশটা আরোও পরিস্কার : সংসারে থাকবি পাঁকাল মাছের মতো - গায়ে পাঁক লাগবে না !

Comments

Popular posts from this blog

রবীন্দ্রনাথের বুদ্ধ পূজা

উনবিংশ শতকের মনীষীদের মধ্যে স্বামী বিবেকান্দ ও রবীন্দ্রনাথ গৌতম বুদ্ধের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল ছিলেন । বৌদ্ধ ধর্ম ভারতে প্রায় বিলুপ্ত হলেও বুদ্ধদেব কিন্তু হিন্দু অবতার বরিষ্ঠদের একজন । তাঁর জীবন ও বাণী সর্ব যুগের আদর্শ হতে পারে । সেই মহতী বাণী সমগ্রের সারমর্ম বিধৃত আছে চারটি শব্দের মধ্যে : মৈত্রী , করুণা, মুদিতা ও উপেক্ষা । প্রতিদিনের জীবন যাত্রায় এই চারটি গুণ অনুসৃত হলে মানুষ তার ক্ষুদ্র সত্তা অতিক্রম করে মহাত্ম্যা হবে , পুনর্জন্মের দুর্ভোগ ভুগতে হবে না ।ব্যাপারটা একটু বিশদ করি । আমরা সাধারণ মানুষরা আলাদা আলাদা সংসার পেতে সুখের সন্ধানে মেতে উঠি । এটা চাই , ওটা চাই - চাওয়ার শেষ নেই ! এই যে সর্বগ্রাসী অভিলাষ , এটাই সকল দু:খের মূল । তাই বুদ্ধ বললেন ," কামনা উপেক্ষা কর । হৃদয়ে সদা বহমান হোক মৈত্রী ও করুণা ধারা । সকলকে আপন কর । শুধু মানুষ নয় , মনুষ্যেতর প্রাণীকুলকেও আপন কর । এই অবাধ সেবা ধর্মের আচরণের ফলে মানুষ মহামানব হবে যা দেবত্ব প্রাপ্তির চেয়েও বড ।সেই অবস্থায় এক অনির্বচনীয় প্রশান্তিতে তার মুখমণ্ডল শোভিত হবে । এরই নাম মুদিতা । এই অপার্থিব রূপই পরিলক্ষিত হয়...

শব্দের মন মাতানো ইতিহাস - একিলিস ও হেক্টরের দ্বন্দ্ব

Achelles' heel -এই ইডিয়ামের অর্থ: কারুর শারীরিক বা চারিত্রিক দুর্বলতার জায়গা ।একিলিস ছিলেন অন্যতম প্রধান গ্রিক বীরদের মধ্যে একজন । কিন্তু তার পায়ের গোডালি ছিল খুব দুর্বল । কেন দুর্বল তা জানতে হলে দুর্যোধনের কাহিনি উঠবেই । কুরু-পাণ্ডবের যুদ্ধ যখন দ্রুত ভয়ংকর পরিণতির দিকে এগুচ্ছে-শতপুত্রের মধ্যে অনেকেই নিহত , তখন গান্ধারী প্রিয় পুত্র দুর্যোধনকে অন্তত বাঁচিয়ে রাখার উপায় ভাবলেন । তিনি পুত্রকে বললেন গোপনে স্নান সেরে নিরাভরণ নিরাবরন দেহে তাঁর সামনে হাজির হতে । গান্ধারী মনে মনে ঠিকক করেছেন তাঁর সাধনা- লব্ধ শক্তি দিয়ে দুর্যোধনের শরীর দুর্ভেদ্য করে দেবেন । শুধু তো একবার চোখ খুলে তাকানোর অপেক্ষা!তাঁর মনের কথা টের পেয়ে শ্রীকৃষ্ণ এক ফাঁকে দুর্যোধনের কানে মন্তর দিলেন: যুবাপুরুষ তুমি ,মায়ের সামনে উলঙ্গ হয়ে দাঁডাবে? লজ্জার মাথা খেয়েছ ? দুর্যোধন তখন একখণ্ড লজ্জানিবারনী বস্ত্র নিম্নাঙ্গে জডিয়ে মায়ের সামনে এল । মা চোখের বাঁধন খুলে তাকানো মাত্র বস্ত্রাবৃত জায়গাটুকু ছাডা দুর্যোধনের বাকি শরীর লৌহ- কঠিন হয়ে গেল । কিন্তু ক্ষতি যা হওয়ার তা হয়ে গেছে । পরের ঘটনা আমাদের সবার ...

যোগ বিষয়ে ব্যতিক্রমী ভাবনা

২১শে জুন বিশ্ব যোগ দিবস । যোগের মাহাত্ম্য ও ভারতের অবদান নিয়ে এতটাই প্রচার চলছে যে কিছু কথা আপনার আমার কানে ঢুকবেই । এই মূহুর্তে আমার নাতনি সেই বহুশ্রুত গানটা গাইছে - বিশ্বসাথে যোগে যেথায় বিহারো ....." এ গান আমার ছেলেও গেয়েছে তার ছেলেবেলায় । তখন ততটা মনোযোগ দিই নি । আজ আমি তাক থেকে গীতবিতান নামিয়ে গানটা বার করে পড়লাম । আমার তাৎক্ষণিক অনুভূতি আপনাদের সাথে ভাগ করে নিচ্ছি । কালজয়ী কবিরা যেহেতু স্থান কাল পাত্রপাত্রী ও রাজনীতির ঊর্ধ্বে , তাই আশা করি আপনাদেরও ভাল লাগতে পারে । সকলেই জানেন, যোগের অর্থ - চঞ্চল মনের গতি রোধ করে ধ্যেয় বস্তু বা সত্ত্বার সঙ্গে একীভূত হওয়া । কিন্তু লক্ষ্য করুন, আলোচ্য গানের বিশ্বপিতা নিজেই যুক্ত হচ্ছেন বিশ্বের সাথে ! শাস্ত্রে আছে - ভক্ত ভগবানকে খোঁজে । এখানে ভক্তের কিন্তু আলাদা স্টেটাস বা প্রিভিলেজ নেই । ভগবান সকলকেই আপন করে নিতে নিজে এগিয়ে এসেছেন । কবিও সাধারণের মধ্যে থেকেই ঈশ্বরের সাথে যুক্ত হতে চাইছেন । দ্বিতীয়ত দেখুন , ধ্যান সম্পর্কে আমাদের প্রচলিত ধারণা হচ্ছে - মনে বনে কোণে - এই তিনটে ধ্যানের উপযুক্ত জায়গা । রবীন্দ্রনাথ বলিষ্ঠ প্...