Skip to main content

শব্দের মন মাতানো ইতিহাস :প্রসঙ্গ জানুয়ারি

সবারই জানা ইংরেজি বছর শুরু হয় জানুয়ারি দিয়ে । শব্দটা এসেছে ল্যাটিন " Januarius " থেকে। এর অর্থ : month of Janus. জানুয়ারির ওপর জেনাসের কী প্রভাব তা যথা সময়ে বলা যাবে ।তার আগে কয়েকটি মজার কথা বলে নিই ।
খ্রীষ্টান মিশনারিরা এক সময় হিন্দু পৌত্তলিকদের খুব হেয় জ্ঞান করত । অথচ প্রাচীন রোমান ও গ্রিকরাও ঘোরতর পৌত্তলিক ছিল। তাদের মিথলজি বহু বিচিত্র দেবদেবীতে ভরা । Janus ছিলেন একজন রোমান দেবতা । তাঁর সামনে পেছনে মুখ ছিল । অর্থাৎ তিনি সামনে পেছনে দুদিকেই দেখতে পেতেন । তাঁর ওপর নগর রক্ষার গুরু দায়িত্ব ন্যস্ত ছিল । সেজন্য তাঁকে সব সময় চার চোখ , চার কান খোলা রাখতে হ'ত । পরবর্তীকালে তাঁর status পরিবর্তন ঘটে । তখন তাঁকে দ্বারপাল হিসেবে দেখা যেত । আমেরিকার উত্তর দিকের আবাসনগুলোতে গেটকিপারকে বলে janitor. বোঝাই যাচ্ছে শব্দটা এসেছে রোমান দেবতা Janus থেকে ।
আমেরিকা যেহেতু দুনিয়া জুডে দাদাগিরি ক'রে বেডায় তাই তারা খোদার ওপর খোদকারির মতো নিউ ইয়র্কের একটি কলেজের ( City college ) শিল মোহরে Janus - এর তিনটি মুখের প্রতিকৃতি মুদ্রিত করেছে । সেখানে লেখা হয়েছে :
Respice, Adspice , Prospice- অর্থ: Look back upon the past , Look at the present , Look to the future .
দেখা যাচ্ছে জেনাসের ডিউটি তালিকায় আমেরিকা বর্তমানকে জুডে দিয়েছে! আমরা কিন্তু আমেরিকার চাপিয়ে দেওয়া কাজের কথা ধরব না । আমাদের আলোচনা জেনাসের দুই মুখ নিয়ে । এখন কথা হচ্ছে দুমুখো দৃষ্টি বা নীতি তো সাধারণত নিন্দার্থেই ব্যবহার করা হয় । শুধুমাত্র একটি ক্ষেত্রে ছাডা - সেটি হচ্ছে কূটনীতি ! আমেরিকা , চীন ইত্যাদি দেশগুলো হামেশাই একই সাথে ভ্রুকুন্চন ও মুচকি হাসি প্রদর্শন করে। এটাকে বলে "kick & kiss" পলিসি ! এটা কিন্তু দোষের নয় !
উপসংহারে আমরা পূর্ব প্রতিশ্রুতি অনুযায়ি Janus -এর সঙ্গে January- র সম্পর্কটা দেখে নেবো। লক্ষ করে দেখুন জানুয়ারি মাস এমন একটা সুবিধেজনক জায়গায় রয়েছে যাকে বলা যায় অতীত ও ভবিষ্যতের সন্ধিস্থল- এর অর্থ তারও দুই মুখ , চার চোখ ! পেছনে বিগত বছর , সামনে আসন্ন নতুন বছরের মাসগুলো ! ভূত ভবিষ্যৎ দেখার এই ক্ষমতা সে উত্তরাধিকার সূত্রে পিতা জেনাসের কাছ থেকে পেয়েছে ।
"অনৃত" নামাঙ্কিত হর্ষ দত্তের একটি ছোট গল্প দেশ পত্রিকায় পডেছিলাম। শব্দটার অর্থ মিথ্যে । গল্পের শুরুতে বাসে বসা এক বয়স্ক ভদ্রমহিলা খানিকটা বিস্ময়ে , খানিকটা শিউরে উঠে লক্ষ্য করলেন তার পাশে বসা তরুণীটি মোবাইল ফোনে অনর্গল মিথ্যে বলে যাচ্ছে ।
কিছুদিন আগে টিভিতে এক ঝলকে আবির চ্যাটার্জির সাথে একজন নবাগতা অভিনেতৃকে দেখলাম । সে কোলকাতায় প্রথমবার এসেছে একটা ইন্টারভিউ দিতে । সে শুনেছে শহরটা মেয়েদের পক্ষে একদম নিরাপদ নয় । তাদের নিয়ে যা তা কাণ্ড হতে পারে । এমনকি বাইরে চালান পর্যন্ত হতে পারে । তাই সকলকেই সে সন্দেহের চোখে দেখে । বাসে তার পাশে একটি মেয়ে এসে বসল । যতক্ষণ থাকল শুধু মিথ্যে কথা বলে গেল । তারপর দ্বিতীয় যে মেয়েটি এল সেও ঝুরি ঝুরি মিথ্যে আওডাল ।
এরপর আমিও ঘরে বাইররে সতর্ক হয়ে কান খাডা রাখলাম । দেখা যাক কে কোথায় মিথ্যে বলছে । সবিস্ময়ে দেখলাম আমার স্ত্রীও ফোনে কথা বলতে বলতে সত্যের লক্ষ্মণরেখা নির্বিকারভাবে অতিক্রম করে চলেছেন ! ভাববেন না আমার র্র্যাডার শুধু মেয়েদের ওপরেই তাক করা আছে । আমার পুরুষ বন্ধুরাও অম্লান বদনে অনৃতভাষণে মেতে ওঠে । জিজ্ঞেস করলে বলে - পরিস্থিতি সামাল দিতে একটু আধটু মিথ্যে বলতেই হয় । এক বন্ধু চটে গিয়ে বলে - তুই যদি মিথ্যে বলতে না চাস তো গরু গাধা ছাগল হয়ে বসে থাক , মিথ্যে বলার পাপ লাগবে না । জানিস তো সত্যবাদী যুধিষ্ঠিরও ধোয়া তুলসি পাতা নয় !
ক্রমে ব্যাপারটা আমাকে পেয়ে বসল । ভাবলাম এই ইন্টারেস্টিং বিষয়টার ওপর পি এইচ ডি করলে কেমন হয় !আজকাল তো যুৎসই বিষয় পাওয়াই মুশকিল ।হয়ত এখনও কেউ মিথ্যের ওপর গবেষণা করে নি ।ওরে বাবা:, খোঁজ করতে গিয়ে দেখি মিথ্যুকদের classification , categorisation , psychological analysis ইত্যাদি অনেক কাল আগেই হয়ে গেছে ! আজ থেকে দু হাজার বছর আগে গ্রিক দার্শনিক Diogenes দিনের আলোয় লন্ঠন হাতে গ্রিসের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতেন সৎ ও সত্যবাদী মানুষের সন্ধানে । তেমন মানুষ বেশি পেয়ছেন কি না সন্দেহ আছে ।যা হোক গবেষণার সুযোগ হাতছাডা হলেও ঘাঁটাঘাঁটি করতে যা যা দেখেছি তার কয়েকটা F B বন্ধুদের সাথে শেয়ার করি :
১) যে লোক সত্য এডিয়ে চলতে চলতে পাকা মিথ্যেবাদী বনে যায় তাকে বলে notorious liar .
2)যে ব্যক্তি মিথ্যেকে শিল্পের স্তরে নিয়ে গেছে এবং কথার জাদুতে যে কোন ধরণের মানুষের মন ভেজাতে পারে তাকে বলে - consummate liar .
3) এমন মিথ্যুক আছে যে মিথ্যে বলতে গিয়ে ধরা পডে , শাস্তি পায় , অপদস্থ হয় - তবও মিথ্যে বলে - তাকে বলে Incorrigible liar .
4)কিছু মিথ্যুক মেদহীন মিথ্যে বলতে পারে না । অর্থাৎ মিথ্যেকে ফুলিয় ফাঁপিয়ে বলতে ভালবাসে । এ কাজটা সে ছেলেবেলা থেকেই করে আসছে ! ওরকম লোককে বলে -congenital liar .
5) এমন কিছু মিথ্যুক আছে যারা সত্য মিথ্যারতফাৎ বোঝে না । মিথ্যে বলাটা তাদের ক্ষেত্রে ব্যামো বিশেষ -এদের বলে pathological liars .
6) জগতে এমন কিছু মিথ্যুক আছে যাদের কল্পনা শক্তি খুব উর্বর । সেই সাথে তাদের জিবও তৈরি উভয়ে উভয়কে পূর্ণ সহযোগিতা করার জন্য ।ফলে তারা মাখনের মতো মোলায়েমভাবে মিথ্যের পর মিথ্যে জাল বুনতে থাকে । আমরা হয়ত তাদের সন্দেহ করতে পারি কিন্তু তাদের বাকচাতুর্যের প্রশংসা না করে পারি না । এ রকমের মিথ্যেবাদীদের বলে - glib liars আরো মজার মজার তথ্য গবেষকদের হাতে আছে কিন্তুআমাদের তো ছ সাতটার বেশি এগুনো ঠিকক না । সাতনম্ব র কেসটা ফেস বুক বন্ধুদের ওপর ছেডে দিলাম । সূত্র: সাধারণত মিছে কথা বলার প্রয়োজন হয় শাস্তি এডাবার জন্য বাঅস্বস্তিকর পরিস্থিতি পাশ কাটিয়ে যাওয়ার জন্য । সে রকম কোন দরকার না থাকলেও অনেকে নিছক মিছে কথা বলার আনন্দেই মিথ্যের পর মিথ্যে বলতে থাকে ।থামতেই চায় না ! এদের কোন শ্রেণীতে ফেলা যায় ! Clue: confirmed liar / chronic liar / philosophic liar .

Comments

Popular posts from this blog

রবীন্দ্রনাথের বুদ্ধ পূজা

উনবিংশ শতকের মনীষীদের মধ্যে স্বামী বিবেকান্দ ও রবীন্দ্রনাথ গৌতম বুদ্ধের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল ছিলেন । বৌদ্ধ ধর্ম ভারতে প্রায় বিলুপ্ত হলেও বুদ্ধদেব কিন্তু হিন্দু অবতার বরিষ্ঠদের একজন । তাঁর জীবন ও বাণী সর্ব যুগের আদর্শ হতে পারে । সেই মহতী বাণী সমগ্রের সারমর্ম বিধৃত আছে চারটি শব্দের মধ্যে : মৈত্রী , করুণা, মুদিতা ও উপেক্ষা । প্রতিদিনের জীবন যাত্রায় এই চারটি গুণ অনুসৃত হলে মানুষ তার ক্ষুদ্র সত্তা অতিক্রম করে মহাত্ম্যা হবে , পুনর্জন্মের দুর্ভোগ ভুগতে হবে না ।ব্যাপারটা একটু বিশদ করি । আমরা সাধারণ মানুষরা আলাদা আলাদা সংসার পেতে সুখের সন্ধানে মেতে উঠি । এটা চাই , ওটা চাই - চাওয়ার শেষ নেই ! এই যে সর্বগ্রাসী অভিলাষ , এটাই সকল দু:খের মূল । তাই বুদ্ধ বললেন ," কামনা উপেক্ষা কর । হৃদয়ে সদা বহমান হোক মৈত্রী ও করুণা ধারা । সকলকে আপন কর । শুধু মানুষ নয় , মনুষ্যেতর প্রাণীকুলকেও আপন কর । এই অবাধ সেবা ধর্মের আচরণের ফলে মানুষ মহামানব হবে যা দেবত্ব প্রাপ্তির চেয়েও বড ।সেই অবস্থায় এক অনির্বচনীয় প্রশান্তিতে তার মুখমণ্ডল শোভিত হবে । এরই নাম মুদিতা । এই অপার্থিব রূপই পরিলক্ষিত হয়...

শব্দের মন মাতানো ইতিহাস - একিলিস ও হেক্টরের দ্বন্দ্ব

Achelles' heel -এই ইডিয়ামের অর্থ: কারুর শারীরিক বা চারিত্রিক দুর্বলতার জায়গা ।একিলিস ছিলেন অন্যতম প্রধান গ্রিক বীরদের মধ্যে একজন । কিন্তু তার পায়ের গোডালি ছিল খুব দুর্বল । কেন দুর্বল তা জানতে হলে দুর্যোধনের কাহিনি উঠবেই । কুরু-পাণ্ডবের যুদ্ধ যখন দ্রুত ভয়ংকর পরিণতির দিকে এগুচ্ছে-শতপুত্রের মধ্যে অনেকেই নিহত , তখন গান্ধারী প্রিয় পুত্র দুর্যোধনকে অন্তত বাঁচিয়ে রাখার উপায় ভাবলেন । তিনি পুত্রকে বললেন গোপনে স্নান সেরে নিরাভরণ নিরাবরন দেহে তাঁর সামনে হাজির হতে । গান্ধারী মনে মনে ঠিকক করেছেন তাঁর সাধনা- লব্ধ শক্তি দিয়ে দুর্যোধনের শরীর দুর্ভেদ্য করে দেবেন । শুধু তো একবার চোখ খুলে তাকানোর অপেক্ষা!তাঁর মনের কথা টের পেয়ে শ্রীকৃষ্ণ এক ফাঁকে দুর্যোধনের কানে মন্তর দিলেন: যুবাপুরুষ তুমি ,মায়ের সামনে উলঙ্গ হয়ে দাঁডাবে? লজ্জার মাথা খেয়েছ ? দুর্যোধন তখন একখণ্ড লজ্জানিবারনী বস্ত্র নিম্নাঙ্গে জডিয়ে মায়ের সামনে এল । মা চোখের বাঁধন খুলে তাকানো মাত্র বস্ত্রাবৃত জায়গাটুকু ছাডা দুর্যোধনের বাকি শরীর লৌহ- কঠিন হয়ে গেল । কিন্তু ক্ষতি যা হওয়ার তা হয়ে গেছে । পরের ঘটনা আমাদের সবার ...

যোগ বিষয়ে ব্যতিক্রমী ভাবনা

২১শে জুন বিশ্ব যোগ দিবস । যোগের মাহাত্ম্য ও ভারতের অবদান নিয়ে এতটাই প্রচার চলছে যে কিছু কথা আপনার আমার কানে ঢুকবেই । এই মূহুর্তে আমার নাতনি সেই বহুশ্রুত গানটা গাইছে - বিশ্বসাথে যোগে যেথায় বিহারো ....." এ গান আমার ছেলেও গেয়েছে তার ছেলেবেলায় । তখন ততটা মনোযোগ দিই নি । আজ আমি তাক থেকে গীতবিতান নামিয়ে গানটা বার করে পড়লাম । আমার তাৎক্ষণিক অনুভূতি আপনাদের সাথে ভাগ করে নিচ্ছি । কালজয়ী কবিরা যেহেতু স্থান কাল পাত্রপাত্রী ও রাজনীতির ঊর্ধ্বে , তাই আশা করি আপনাদেরও ভাল লাগতে পারে । সকলেই জানেন, যোগের অর্থ - চঞ্চল মনের গতি রোধ করে ধ্যেয় বস্তু বা সত্ত্বার সঙ্গে একীভূত হওয়া । কিন্তু লক্ষ্য করুন, আলোচ্য গানের বিশ্বপিতা নিজেই যুক্ত হচ্ছেন বিশ্বের সাথে ! শাস্ত্রে আছে - ভক্ত ভগবানকে খোঁজে । এখানে ভক্তের কিন্তু আলাদা স্টেটাস বা প্রিভিলেজ নেই । ভগবান সকলকেই আপন করে নিতে নিজে এগিয়ে এসেছেন । কবিও সাধারণের মধ্যে থেকেই ঈশ্বরের সাথে যুক্ত হতে চাইছেন । দ্বিতীয়ত দেখুন , ধ্যান সম্পর্কে আমাদের প্রচলিত ধারণা হচ্ছে - মনে বনে কোণে - এই তিনটে ধ্যানের উপযুক্ত জায়গা । রবীন্দ্রনাথ বলিষ্ঠ প্...