Skip to main content

শব্দের মন মজানো কাহিনী : প্রসঙ্গ-ড্রিল মাস্টারের অমরত্ব

1962 সালে চীন-ভারতের যুদ্ধে চীনাদের হাতে ভারতীয় সৈন্যবাহিনী বিচ্ছিরিভাবে অপদস্থ হয়েছিল। অপদস্থ হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে এই যে ভারতের প্রধান
মন্ত্রী শান্তির দূত হিসেবে গোটা বিশ্বে ঘুরে বেড়াতেন l প্রতিরক্ষা দপ্তর সামলানোর ভার ন্যস্ত ছিল ভি কে কৃষ্ণ মেননের হাতে l তিনি তাঁর ব্যক্তিগত অভিধান থেকে " war preparedness " কথাটা অপ্রয়োজনীয় ভেবে কেটে দেন l তাঁর ধারণা ছিল-যে দেশের স্বনামধন্য প্রধানমন্ত্রী মৈত্রীর বাণী নিয়ে দেশে দেশে ভ্রlম্যমান সে দেশ কি কখনও আক্রান্ত হতে পারে ? তাছাড়া , চীনের প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাই নেহেরুজির বন্ধু ছিলেন l দুটো দেশই " পঞ্চশীল " মৈত্রীমন্ত্র অনুসরণ করবে বলে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল l তাই অপ্রত্যাশিত এই যুদ্ধের পর প্রতিরক্ষা মন্ত্রী গদিচ্যুত হলেন l প্রধানমন্ত্রী ভগ্নহৃদয়ে দু বছরের মধ্যেই মরদেহ রাখলেন l ঐ ধাক্কা খাওয়ার পর প্রতিরক্ষা দপ্তরের টনক নড়ে l সেনাবাহিনী ঢেলে সাজানোর কারিক্রমের মধ্যে স্কু ল
কলেজে ব্যাপকভাবে N C C training course চালু হয়ে যায় l
আমাদের কলেজের ( ভিক্টোরিয়া কলেজ- বর্তমান নাম : এ বি এন শীল কলেজ , কোচবিহার ) অনতিদূরেই মিলিটারী ব্যারাক l সরকারী কলেজের ওপর যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে ট্রেনার পাঠানো হ'ত মানানসই চেহারার -লম্বা,চওড়া ও,গোঁফধারী! ড্রিল/ প্যারেড হ'ত খেলার মাঠে l মেইন বিল্ডিং এর পেছন দিকে মাঠের দিকে মুখ করা একটা ছোট রুমে আমরা ইংরেজি অনার্সের ছেলেমেয়েরা স্যারের জন্য অপেক্ষা করছিলাম এবং প্যারেড দেখছিলাম l অনার্সের ছাত্র হিসেবে আমাদের ক্ষেত্রে প্যারেড করা কমপালসরি ছিল না l ট্রেনারের মুখ থেকে " ব্লাডি ফুল " জাতীয় গালির ঝড় বইছিল l হাতের ডাণ্ডাও পড়ছিল গড়বড় করা ছেলেদর নিম্নাঙ্গে অনবরত l স্যার সেই মারকুট্টে ট্রেনারের মূর্তি দেখে ও তার গালির খানিকটা শুনে বলে উঠলেন ," A Martinet has come indeed ! "
আমরা "A Daniel has come " -এই কথাটার সাথে পরিচিত ছিলাম l এই সংলাপটা শাইলকের l The Merchant of Venice নাটকে আছে l ভিনিসের কোর্টে ছদ্মবেশী পোর্শিয়ার সওয়াল শুনে শাইলকের মনে আশা জেগেছিল, সে ন্যায় বিচার পাবে l দেনার দায়ে অভিযুক্ত ব্যাসানিয়োর বুক থেকে এক পাউণ্ড মাংস কেটে নিশ্চয়ই তাকে দেওয়া হবে ! কিন্তু মার্টিনেট সম্পর্কে আমরা কিছু জানতাম না l স্যারকে জিজ্ঞেস করতেও সাহস হয়নি l পরে অবশ্য রহস্যটা ভেদ হয় l মার্টিনেট কথাটা যে কোন কড়া মেজাজের Boss, Headmaster, বা Task master সম্পর্কে বিদ্রুপাত্মক অর্থে ব্যবহার করা হয় l ঐ নামের একজন ড্রিল মাস্টার ফরাসী সম্রাট চতুর্দশ ল্যুই- এর সৈনবিভাগে সত্যি সত্যি ছিল l লোকটার কড়া নজর এড়িয়ে এতটুকু বেনিয়ম হওয়ার জো ছিল না l ড্রিল মাস্টারের পুরো নাম General Jean Martinet. তার উৎকট ডিসিপ্লিনপ্রিয়তার সংবাদ ক্রমে ফ্রান্সের সীমানা ছাড়িয়ে পুরো ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে l সবচেয়ে বড় খবর এটাই যে একজন সামান্য ড্রিল মাস্টারের নাম ভাষা-ভাণ্ডারে ঢুকে প'ড়ে অমরত্বের মার্কা পেয়ে যায় !

Comments

Popular posts from this blog

রবীন্দ্রনাথের বুদ্ধ পূজা

উনবিংশ শতকের মনীষীদের মধ্যে স্বামী বিবেকান্দ ও রবীন্দ্রনাথ গৌতম বুদ্ধের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল ছিলেন । বৌদ্ধ ধর্ম ভারতে প্রায় বিলুপ্ত হলেও বুদ্ধদেব কিন্তু হিন্দু অবতার বরিষ্ঠদের একজন । তাঁর জীবন ও বাণী সর্ব যুগের আদর্শ হতে পারে । সেই মহতী বাণী সমগ্রের সারমর্ম বিধৃত আছে চারটি শব্দের মধ্যে : মৈত্রী , করুণা, মুদিতা ও উপেক্ষা । প্রতিদিনের জীবন যাত্রায় এই চারটি গুণ অনুসৃত হলে মানুষ তার ক্ষুদ্র সত্তা অতিক্রম করে মহাত্ম্যা হবে , পুনর্জন্মের দুর্ভোগ ভুগতে হবে না ।ব্যাপারটা একটু বিশদ করি । আমরা সাধারণ মানুষরা আলাদা আলাদা সংসার পেতে সুখের সন্ধানে মেতে উঠি । এটা চাই , ওটা চাই - চাওয়ার শেষ নেই ! এই যে সর্বগ্রাসী অভিলাষ , এটাই সকল দু:খের মূল । তাই বুদ্ধ বললেন ," কামনা উপেক্ষা কর । হৃদয়ে সদা বহমান হোক মৈত্রী ও করুণা ধারা । সকলকে আপন কর । শুধু মানুষ নয় , মনুষ্যেতর প্রাণীকুলকেও আপন কর । এই অবাধ সেবা ধর্মের আচরণের ফলে মানুষ মহামানব হবে যা দেবত্ব প্রাপ্তির চেয়েও বড ।সেই অবস্থায় এক অনির্বচনীয় প্রশান্তিতে তার মুখমণ্ডল শোভিত হবে । এরই নাম মুদিতা । এই অপার্থিব রূপই পরিলক্ষিত হয়...

শব্দের মন মাতানো ইতিহাস - একিলিস ও হেক্টরের দ্বন্দ্ব

Achelles' heel -এই ইডিয়ামের অর্থ: কারুর শারীরিক বা চারিত্রিক দুর্বলতার জায়গা ।একিলিস ছিলেন অন্যতম প্রধান গ্রিক বীরদের মধ্যে একজন । কিন্তু তার পায়ের গোডালি ছিল খুব দুর্বল । কেন দুর্বল তা জানতে হলে দুর্যোধনের কাহিনি উঠবেই । কুরু-পাণ্ডবের যুদ্ধ যখন দ্রুত ভয়ংকর পরিণতির দিকে এগুচ্ছে-শতপুত্রের মধ্যে অনেকেই নিহত , তখন গান্ধারী প্রিয় পুত্র দুর্যোধনকে অন্তত বাঁচিয়ে রাখার উপায় ভাবলেন । তিনি পুত্রকে বললেন গোপনে স্নান সেরে নিরাভরণ নিরাবরন দেহে তাঁর সামনে হাজির হতে । গান্ধারী মনে মনে ঠিকক করেছেন তাঁর সাধনা- লব্ধ শক্তি দিয়ে দুর্যোধনের শরীর দুর্ভেদ্য করে দেবেন । শুধু তো একবার চোখ খুলে তাকানোর অপেক্ষা!তাঁর মনের কথা টের পেয়ে শ্রীকৃষ্ণ এক ফাঁকে দুর্যোধনের কানে মন্তর দিলেন: যুবাপুরুষ তুমি ,মায়ের সামনে উলঙ্গ হয়ে দাঁডাবে? লজ্জার মাথা খেয়েছ ? দুর্যোধন তখন একখণ্ড লজ্জানিবারনী বস্ত্র নিম্নাঙ্গে জডিয়ে মায়ের সামনে এল । মা চোখের বাঁধন খুলে তাকানো মাত্র বস্ত্রাবৃত জায়গাটুকু ছাডা দুর্যোধনের বাকি শরীর লৌহ- কঠিন হয়ে গেল । কিন্তু ক্ষতি যা হওয়ার তা হয়ে গেছে । পরের ঘটনা আমাদের সবার ...

যোগ বিষয়ে ব্যতিক্রমী ভাবনা

২১শে জুন বিশ্ব যোগ দিবস । যোগের মাহাত্ম্য ও ভারতের অবদান নিয়ে এতটাই প্রচার চলছে যে কিছু কথা আপনার আমার কানে ঢুকবেই । এই মূহুর্তে আমার নাতনি সেই বহুশ্রুত গানটা গাইছে - বিশ্বসাথে যোগে যেথায় বিহারো ....." এ গান আমার ছেলেও গেয়েছে তার ছেলেবেলায় । তখন ততটা মনোযোগ দিই নি । আজ আমি তাক থেকে গীতবিতান নামিয়ে গানটা বার করে পড়লাম । আমার তাৎক্ষণিক অনুভূতি আপনাদের সাথে ভাগ করে নিচ্ছি । কালজয়ী কবিরা যেহেতু স্থান কাল পাত্রপাত্রী ও রাজনীতির ঊর্ধ্বে , তাই আশা করি আপনাদেরও ভাল লাগতে পারে । সকলেই জানেন, যোগের অর্থ - চঞ্চল মনের গতি রোধ করে ধ্যেয় বস্তু বা সত্ত্বার সঙ্গে একীভূত হওয়া । কিন্তু লক্ষ্য করুন, আলোচ্য গানের বিশ্বপিতা নিজেই যুক্ত হচ্ছেন বিশ্বের সাথে ! শাস্ত্রে আছে - ভক্ত ভগবানকে খোঁজে । এখানে ভক্তের কিন্তু আলাদা স্টেটাস বা প্রিভিলেজ নেই । ভগবান সকলকেই আপন করে নিতে নিজে এগিয়ে এসেছেন । কবিও সাধারণের মধ্যে থেকেই ঈশ্বরের সাথে যুক্ত হতে চাইছেন । দ্বিতীয়ত দেখুন , ধ্যান সম্পর্কে আমাদের প্রচলিত ধারণা হচ্ছে - মনে বনে কোণে - এই তিনটে ধ্যানের উপযুক্ত জায়গা । রবীন্দ্রনাথ বলিষ্ঠ প্...